বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বাংলা ভাষায় স্বকীয়তা রক্ষা

সময়ের সাফ কথা....
বাংলা ভাষায়স্বকীয়তা রক্ষা
- আইরিন আক্তার

মূল কথা : বাংলা ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা।
মূল কথা :বাংলা ভাষা স্বকীয়তা রক্ষার নীতিমালা চাই। বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে ইংরেজী অথবা কোন ভাষা চর্চায় কোন বিদ্বেষ নাই।
অনুরোধ : উৎসাহী না করতে পারেন আমাকে অনুৎসাহিত করবেন না।
জিজ্ঞাসা : ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের দাম আমরা দিতে পারব না তবে সম্মান জানাতে অর্থাৎ ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করতে আপত্তি কিসের?
পরামর্শ : মানুষ অপরাধ করে। আইন দিয়ে অপরাধ যেমন করে নির্মূল করা যায় না। কিন্তু লাগাম টেনে ধরা যায় তেমন করেই ভাষা গতিশীল জেনেই আমাদের ভাষার স্বকীয়তাকে উদ্দেশ্য :  লাগাম টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
উদ্দেশ্য : সমালোচনা নয়, সমঝোতা।
পদক্ষেপ : সুনাগরিক হিসেবে স্ব উদ্যোগ সচেতন হতে চাই, সচেতন করতে চাই। ভাষা রক্ষা পরের কথা আগে ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা সংস্থার সন্ধান চাই। সদস্য হতে চাই।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি .... ছেলে হারা শত মায়ের বেদনা আমি কি ভুলিতে পারি।
ছেলে হারা মায়ের বেদনায় আপ্লুত হয়ে গান, পুস্তক রচিত হয়, সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সর্বপ্রথমে বাংলাভাষার স্বকীয়তা রক্ষার আইন তৈরি এবং প্রয়োগ প্রয়োজন। ‘আইন তৈরি’ এই প্রসঙ্গে যদি কেউ বলে আইন দিয়ে কি হবে, ক’জন আইন মানে? প্রয়োজন জনসচেতনতা। তাদের কথায় যুক্তি আছে তবে এক্ষেত্রে আমাদের জানা প্রয়োজন বাংলাদেশে যানবাহন আইন (ট্রাফিক আইন) আছে। কেউ যদি নাও মানে তবুও সে জানে, সে অন্যায় করছে। এই জানা থেকে একদিন হয়ত তার বোধোদয় হবে। এই সূত্রে বলা যায়, একজন ব্যবসায়ী যখন নামফলক (সাইনবোর্ড) তৈরি করেন, ঔষুধ ব্যবসায়ী হলে উদাহরণ স্বরূপ ‘মহিমা মেডিসিন কর্ণার’ লিখেন। যেখানে উচিত ছিল ‘মহিমা ঔষধালয়’ বা ‘মহিমা ঔষধ বিতান’ লেখা। যদি এ ক্ষেত্রে আইন থাকত বাংলিশ, নামফলক তৈরি করা যাবে না, প্রথমে সম্পূর্ণ বাংলা তারপর ইংরেজী ব্যবহার করা যাবে তাহলে একজন ভুলকারী ভুল করলেও মনে মনে জানতেন যে তিনি ভুল করছেন। এরকম হাজারও উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। একজন সচেতন ব্যক্তির চোখে ভুল পড়লে তিনি সেই ব্যবসায়িকে বললে হয়তো সংশোধন সম্ভব। কিন্তু আইন না থাকলে ওই ব্যবসায়ী কোন কিছুতেই কর্ণপাত করবেন না। নামের কোন অর্থ থাকে না বা ভুল হয় না এ দৃষ্টিতে যদি কেউ অমত করে, তাহলে বলব অন্তত নুতন প্রজন্মের স্বার্থে আমরা অর্থবহ নামফলক তৈরি করি। শিশুরা পরিবেশ থেকেও শিক্ষা নেয়।
কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী। কিন্তু এখানে গণনাকারী বললে কম্পিউটার বলতে যা বোঝায় তা বোঝানো যাবে না। এ ধরনের ক্ষেত্রগুলো ছাড়া ইংরেজী শব্দের ব্যবহার, বাংলা ভাষাকে হত্যা করার ঔষুধ বা রোগাক্রান্ত করার জীবাণু। গণমাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের তুলনায় প্রচারিত সংবাদে যথাসম্ভব ইংরেজী শব্দের কম ব্যবহার দেখা যায়, সেটিকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করা দরকার। গণমাধ্যমে উপস্থাপনা যেটি ইংরেজীতে হয় সেটিতে ভুল করেও বাংলা বলা হয় না। তাই বাংলা উপস্থাপনায় ইংরেজী শব্দের পরিহার আবশ্যক।  প্রয়োজনে পুরো বাক্য বলা যাবে, কিন্তু শব্দ না।
উদাহরণ : ‘তুমি আমার ফ্রেন্ড’ না বলে (বিচ্ছিন্নভাবে ভিন দেশীয় শব্দ ব্যবহার না করে) পুরো বাক্য ইংরেজীতে বলা ‘ইউ আর মাই ফ্রেন্ড’। স্বাস্থ্য, ধন-সম্পদ হারালে ফিরে পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ভাষার স্বকীয়তা হারিয়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনা যে অতি দুষ্কর তা সহজেই অনুমেয়। সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য সঠিক অভিভাবক প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক যেমন করে অন্যান্য ব্যাংকের অভিভাবক। তেমন করে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভাষার দিক থেকে অন্যান্য গণমাধ্যমের অভিভাবক হওয়া প্রয়োজন।
মোবাইল বিদেশী পণ্য হওয়া সত্ত্বেও এর বাংলা নামকরণ হয়েছে মুঠোফোন, তাহলে ‘পুলিশ কন্ট্রোল রুম’ লেখার আগে ‘পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ কেন লেখা যায় না। অবাক করার বিষয় হল এ ব্যাপারটি দেখা যায় ভাষার মেলা, প্রাণের মেলা বই মেলাতেও। দোকান নং না লিখে স্টল নং লেখা হয়েছে, এরকম আরো অনেক বিষয় রয়েছে মেলাতে তথ্যকেন্দ্রে, বাংলা একাডেমী কার্যালয়ে এগুলো বলার চেষ্টা করেছি সাড়া পাইনি। কাউকে কটাক্ষ করে নয় অনুরোধ করে সচেষ্ট হতে চাই।
ভাষা মানুষের মুখের বুলি। মানুষের রোগ হয় চিকিৎসা হয়। ভাষারও রোগ হতে পারে, উপযুক্ত চিকিৎসায় রোগ সারানো সম্ভব। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ এর ‘ইনস্টিটিউট’ এই অংশ সরিয়ে ‘প্রতিষ্ঠান’ লিখলে এবং নিচে ‘ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট’ লিখলে বড় কোন অসুবিধা হবে না। প্রত্যেকটি ভাষাতেই ভিনদেশী শব্দ থাকে। আমাদের ভাষার রক্তাক্ত ইতিহাসের মত অন্য ভাষার এমন ইতিহাস নেই তাই আমরা অবশ্যই অন্যান্য ভাষাভাষীর চেয়ে ভিন্ন হব, সংবেদনশীল হব। ‘ভাষা গতিশীল’ চির সত্য এ কথা মেনেই ভাষার লাগাম ধরা যায়।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পরিচালিত প্রশিক্ষণ কোর্সে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ক্লাসের সময়সূচি।
এই সময়সূচিতে অনেকগুলো কর্মসূচি আছে কিন্তু শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা শেখার, উচ্চারণের কোন কর্মসূচি নেই। মূল শিরোনামে কোর্স-এর অর্থ কার্যধারা এবং ক্লাসের অর্থ শ্রেণী। বহুল প্রচলিত ভিনদেশী শব্দ ব্যবহারে কোন ভুল না হলেও ‘কোর্স’ এবং ‘ক্লাস’ এর বাংলা শব্দ এখনও হারিয়ে যায়নি।

আলাদিনের আশ্বর্য প্রদীপের আশ্চর্য ক্ষমতার প্রতীক স্বরূপ যদি কারও ক্ষমতা থাকে - তিনি যদি মনে করেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, যে স্বাধীনতার মূল চেতনা বর্তমানে বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন তাজা রক্তাক্ত প্রাণহীন দেহ প্রয়োজন তবে আমি দেব। এ লেখা পড়ে যদি কারও মনে হয় প্রাণ দেয়া বর্তমানে বিশ্বাসযোগ্য নয় তাদের আমি জানাতে চাই, আত্মহত্যা মহাপাপ জেনেও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি কেউ আত্মহত্যা করতে পারে, তাহলে দেশের জন্য ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া মঙ্গলজনক জেনেও কেন আমি জীবন দিতে পারব না? কেন বিশ্বাসযোগ্য হবে না? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন