বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬

সরলে গরল!


সময়ের সাফ কথা....
সরলেগরল!

নজরুল ইশতিয়াক ॥ সহজ এখানে সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে দূর্বোধ্য। সরল এখানে গরলে মিশে চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। মনে হবে দুই মন পাথরের টুকরার ভেতর থেকে একটি চালের টুকরা বের করার মত। আগে মনে করতাম যার যা বলার না তাই বলছে। এখন মনে হয় ঠিকই বলছে। যার যা বলার, সে তা-ই বলছে। আর তাই কোন মান বহন করে না এমন সব অরুচিকর বাক্যালাপে পরিবেশ অসহনীয় বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। জনগণ যাদের রাজনীতি করার অনুমতি-সম্মতি কোন কিছুই দেয়নি উপরন্তু যারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের উপর কোন ভরসা করে না, ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা থাকার জন্য তারাই প্রতিটি কথায় জনগণ জনগণ বলে চিৎকার করতে করতে ভারি করে তুলছে বাংলার আকাশ বাতাস। ক্ষমতা কিনতে যেয়ে আত্মসম্মান, মান মর্যাদা বিকানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বাঙালির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাকোয়াজ ও অপরাজনীতির সময় এটি। রাজনীতি নামক শব্দটায় প্রাণ যেন ত্রাহি ত্রাহি করছে। মিথ্যাচারের কবিতা আবৃত্তিতে পটু কাপালিক নেতা নেত্রীদের শব্দযন্ত্র তবু বন্ধ হয় না। ভয়ানক শব্দ দূষণের শহর এই ঢাকা আর মাঝরাতের ব্যাঙগুলো। তিন চার দিক থেকে ওয়াজ বয়ানের নামে অরুচিকর যান্ত্রিক দূষণ এতটাই ভয়াবহ যে স্মরণকালের সমস্ত দূষনকেও হার মানাবে। রাস্তায়, অফিস পাড়ায়, বাজারের মোড়ে মোড়ে আড্ডায় সব ধরনের আলাপ চারিতায় সীমাহীন অস্থিরতা ও বাক্য দূষণ আমাদের চরম অসুস্থতাকেই তুলে ধরছে। অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি যেদিকে তাকায় সব অসুস্থ্যতাকে দেখতে পায়। 
যাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোন সততার সৌন্দর্য নেই তারাই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার দেশের ভবিষ্যৎ কামনা নিয়ে। সরকারী সম্মানজনক পেশায় থেকে অবসরের পর আরো কোন লোভনীয় পদ পদবী পাওয়ার দৌঁড়ে বেহায়া নির্লজ্জতার বীভৎসতা দেখতে হচ্ছে আমাদের। ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে বের হতেই পারছে না রাজনীতি। একটার পর একটা গেম প্ল্যান শান্তি সমৃদ্ধির পথ আটকে দাড়াচ্ছে ।
চরিত্রহীনরা চরিত্রবান হবার দৌড়ে পেরেশান হয়ে ধরাশায়ি হলেও ব্যাধির মাত্রা এতটাই উর্দ্ধমূখী যে হৃদয়যন্ত্রে লাজ-লজ্জা, লোক-লজ্জার ছিটে ফোঁটাও ধরা দেয় না। প্রাসঙ্গিক কারনে সিলগালা মারা কিংবা মোহর মেরে দেয়া লোক কাকে বলে এটি নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস কিছু বাকোয়াজ হাসফাঁস হা-হুতাসের আস্ফালন না চাইলেও শুনতে হয় দেখতে হয়। নরম আড্ডায় হাস্যবাণে কম্পন উঠে- এসব বাকোয়াজ পন্ডিতদের কথা বলার অনুমতি যারা দিয়েছে তারাও ক্লীবলিঙ্গের অধিকারী। সংশোধনের অতীত সেসব পারদর্শী ব্যক্তিদের প্রতি করুণা বর্ষণ না করে পার পাওয়ার উপায় থাকে না।
আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর জেনে লাভ নেই যারা বলতেন তাদের স্মরণ জাগ্রত করতে বলতে চাই সুদের কারবারি তো বিশ্বজয়ের কাল্পনিক স্বপ্নে বিভোর এটিকে আপনারা কি বলবেন ? যুৎসই কোন উত্তর পেলে দয়া পরবশ হয়ে জানাবেন। আর তাকে কি কি কারণে কোন কোন শর্তপূরণের জন্য সেলসম্যান নিয়োজিত করা হল তা অনুধাবণে ব্যর্থতার মূল্য চরম হবার কথা। পটুয়া কামরুল হাসান স্বৈরাচার এরশাদের পোট্রেট একে বলেছিলেন বিশ্ববেহায়ার কবলে দেশ। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন সূদ-সামাজিকতার মহানায়কের বিশেষণ কি হতে পারে? অন্যদিকে পত্রিকার পাতায় ষড়যন্ত্রের নকশা আকঁতে আকঁতে যারা মসনদ দখলের নেশায় বুদ হয়ে ভয়ানক ছঁক আঁকেন, কালো পোষাকের অন্তরালে যে সত্যিই কালো নষ্ট ভ্রষ্ট আইনবাজ নপুংসক চরিত্রহীনদের পরামর্শ জাতিকে হজম করতে হচ্ছে তাদেরকেই বা কি বলা যেতে পারে। একই সাথে প্রশ্ন হিসেবে জানার আগ্রহ সূদের সাথে ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র কোথায়?
সূত্র বলছে সব নষ্ট, সব ভ্রষ্ট, সব ঘাতকেরা মিলে-মিশে একাকার হয়। যে কয়েকদিন তাদেরকে আলাদা দেখা যায় তা দেখার ভ্রমমাত্র। যোগসূত্র খুঁজে পাবার জন্য কিয়ৎকাল অপেক্ষার সংস্কৃতি যার জোটে সেই তো মহাভাগ্যবান। মহাকালের কাছে মানুষের দুটি ভাগ। একটি হচ্ছে মহা হতভাগ্যবান আর অন্যটি মহাভাগ্যবান। ঈমান ও বেঈমানের ফারাক নিরূপনই তো জন্মের স্বার্থকতা। নিরন্তর এই পথ চলার সত্য, পর্যবেক্ষণ করে দেখার মধ্যে সত্যানুসন্ধ্যানীদের পরম আনন্দ।
বলা হচ্ছে দুটি পত্রিকার সম্পাদক সব সময় ষড়যন্ত্র করে আসছে তখন প্রশ্ন আসে সরকার ও দলের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রকারীদের কি চিহ্নিত করা গেছে? ঘরের শত্রু বিভীষণ। ঘরের শত্রু মোশতাকরা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় ফাঁদ পেতে বসে থাকে। ঘরের শত্রুকে চিনলে জানলে বাইরের শত্রুদের চেনা সহজ হয়। বিনয়ের সাথে বলতে চাই লর্ড ক্লাইভ যেমন সব সময় বর্তমান তেমনি মোশতাকরাও আশে পাশে ঘুরঘুর করে। বর্ণচোরা সেসব ঘাতকদের চিহ্নিত করতে পারাটা দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের জন্য বড় আশীর্বাদ।
জানতে ইচ্ছে করে সরকারের ও দলের আশেপাশে থেকে যারা দ্বৈতনাগরিকত্ব কিংবা শরণার্থী জীবন বেছে নিয়েছেন তাদের ব্যাপারে জনগণ কি মূল্যায়ণ করছেন তা প্রবাহমান বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়। দেশে শান্তি স্থিতি গণতন্ত্রের কথা বলে বিদেশে নিরাপদ জীবন যাপনের প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন করেছেন বা করার চেষ্টা করছেন তাদের দেশপ্রেম জনগণের কাছে নিক্তি দিয়ে পরিমাপ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বদলী খেলোয়াড় হবার জন্য সব সময় অন্যের দিকে যারা তাকিয়ে থাকেন তাদের চরিত্র জানাটা খুব জরুরী দরকার ।
মানুষের রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পেরে যারা লাশ ফেলে দেয়ার পরামর্শ দেন, লেখালেখি সম্মানজনক পেশা স্বত্ত্বেও যারা রাজ সুবিধার আশায় এজেন্সী তল্পিবাহক হওয়াকেই শ্রেয় মনে করেন তাদের প্রতি দেশবাসী বড্ড করুণার চোখে তাকিয়ে থাকেন। এসব নিদারুন অসহায়ত্বকে সংজ্ঞায়িত করার ভাষা কারো জানা নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সুশীল তল্পিবাহকদেরকে জনগণ হাড়ে হাড়ে চিনে রাখছেন।
এই লেখার শেষ করবো একটি প্রশ্ন দিয়ে, মানব সম্প্রদায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত যত ব্যবসা করেছে সব ব্যবসা কি অসামাজিক ছিল? সামাজিক ব্যবসার নামে এ কোন আষাড়ে গল্প দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীকে শুনতে হচ্ছে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন