বুধবার, ২৪ জুন, ২০১৫

সময়ের সাফ কথা.... সত্য ও শান্তির সৌন্দর্য্যের সন্ধানে বেড়ানো পথিক

সময়ের সাফকথা....
সত্যও শান্তির সৌন্দর্য্যের সন্ধানে বেড়ানো পথিক

নিজেদের সহজিয়া সত্য ও শান্তির পথের সাথে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলার সূফীতত্ত্ব। বাংলার নদী-খালবিলের জল সিঞ্চনে মরুভূমির ইসলাম এখানে সতেজ সবুজ এক সহিষ্ণু রূপ ধারণ করেছিলো। পেট্রোডলারের টানে আর বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতির কল্যাণে সবই আজ বিভ্রান্তির বেড়াজালে। নদীমাতৃক সেই সূফী সহিষ্ণুতা, সর্বধর্ম সমন্বয় আজ মরিচীকা হতে যাচ্ছে।
সংলাপ ॥ ইরানে সূফী সাধনা এবং সূফীদের ওপর অত্যাচারের ইতিহাসটা নিকট প্রাচীন। কিন্তু বর্তমান ইরানে সূফীদের ওপর যে অত্যাচার শুরু হয়েছে, সেটা একমাত্র নাজি জার্মানির সাথে তুলনীয়।
কয়েক মাস আগে কোম শহরের এক সূফী গৃহে জড়ো হয়েছিলো হাজার খানেক সূফী। সূফীদের সাধনার পথ শুধু নামাজ রোজা রাখা নয়। সূফীদের আচার-আচরণ সর্বত্রই স্থানীয় সংস্কৃতির মাটি থেকে নেয়া - আরব মরুভূমির রুক্ষ, নীরস, কঠোর ইসলাম সূফীদের পথ নয়। তারা জীবন রসিক-নাচ-গান ও জীবনের প্রতিটি কর্মের মাধ্যমে চলে তাদের উপাসনা। যা সার্বজনীন অলৌকিক সাধনার অংশ - যেখানে আমার ধর্মের লোক, আমার দেশের লোকের অস্তিত্ব নেই। আছে শুধু মানুষের মধ্যে, প্রকৃতির মধ্যে সৌন্দর্য্যের সন্ধান (দরবিশ)। বাংলাদেশ, ভারত বা ইন্দোনেশিয়ায় দলে দলে লোকে ইসলামে যোগ দিয়েছিলো সূফী ধর্মের অসাধারণ সহজিয়া পথে আকৃষ্ট হয়ে। সূফীরা বিশ্বাস করে এই মহাবিশ্ব আসলেই এক সুতোয় বাধা একটিই মাত্র ঘটনা এবং পরম সত্যের বিচিত্র প্রকাশ। তাঁদের আল্লাহ্‌ বিশ্বাস ও ভাবনা সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের একটা সেতু বন্ধন। দুর্ভাগ্য ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামের ইতিহাসের। সূফী ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে এক সময় যেসব অত্যাচারিত হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করেছিলো তাদের উত্তরপুরুষ বর্তমানের তথাকথিত মুসলমানরা আরবের বর্বর অসহিষ্ণু ইসলামকেই নিজের ধর্ম বলে মনে করেন!
নিজেদের সহজিয়া সত্য ও শান্তির পথের সাথে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলার সূফীতত্ত্ব। বাংলার নদী-খালবিলের জল সিঞ্চনে মরুভূমির ইসলাম এখানে সতেজ সবুজ এক সহিষ্ণু রূপ ধারণ করেছিলো। পেট্রোডলারের টানে আর বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতির কল্যাণে সবই আজ বিভ্রান্তির বেড়াজালে। নদীমাতৃক সেই সূফী সহিষ্ণুতা, সর্বধর্ম সমন্বয় আজ মরিচীকা হতে যাচ্ছে।
কোম শহরে হুলিয়া জারি হয়েছিল, সমস্ত সূফী উপাসনা বন্ধ করতে হবে, কেননা তা ইসলামের পক্ষে সাংঘাতিক ক্ষতিকর। তা তো বটেই। শিক্ষাটা যদি হয় সমস্ত মানুষকে ভালোবাসার, মানুষে মানুষে বিভেদের বিরুদ্ধে এবং আল্লাহ্‌র সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ওপর টানটা যদি থাকে বেশি, তাহলে ইসলামের ব্যবসাটা আর থাকে কি করে? সেটা তো ইরানের মোল্লাতন্ত্রের মনঃপুত হওয়ার কথা নয়।
ব্যাপক অত্যাচার শুরু হয়েছে ইরানের সূফীদের ওপর। সূফীদের জমায়েতে হামলা করে হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
ইরানের শাসকরা এক ধর্মোন্মাদ পাগল, তারা ক্ষমতায় আসলে নিজেদেরকে মেহেদি ভাবছে! ইরানের মোল্লাতন্ত্রের মতন নাৎসি সমাজ ব্যবস্থায়, এমন পাগল আরো দুরন্ত হয়ে কখনো ইসরায়েলকে নিউক করার কথা বলে, কখনো আলাক্সায় রিলোকেট করতে বলে।

পৃথিবীতে দুষ্ট রাজনীতিকরা থাকবেন - সেটাই বাস্তব। সেটা সমস্যা হয় তখই যখন দেখা যায় তাদের পিছনে পৃথিবীর ৯৯% তথাকথিত মুসলমান, আর পশ্চিমা দেশে মুসলমান পেটানোর এজেন্ডার পেছনে অধিকাংশ অমুসলিম। পশ্চিমা দেশের ৭০% লোক চান যে, মুসলিমদের আরো পেটানো উচিৎ। মুসলমানদের ৯৯% লোক চান ইসরায়েলকে উড়িয়ে দেয়া হোক। এটাই বাস্তব। মানুষের এই সমর্থনই আসল সমস্যা - যার উৎপত্তি অস্তিত্বের সংকট থেকে। আমি মুসলমান, আমি হিন্দু এই ভেবে মানুষ গর্ব বোধ করে! দেশের সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা সেটাই শেখায় - এটাই আসল সমস্যা! তাই সূফী সাধক রুমির মতো যতদিন মানুষ না ভাবতে পারবে, সে মুসলিম বা হিন্দু না, সে ভারতীয় বা বাংলাদেশী না, সে তার অতীত নয়, সে বর্তমান না, সে শুধুই অমৃতের সন্ধানে, সত্য ও শান্তির সৌন্দর্য্যের সন্ধানে বেড়োনো এক পথিক, ততদিন পর্যন্ত এই অস্তিত্বের সংকট থেকে মুক্তি কি হবে? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন