হিংস্রতা-নৃশংসতা-রুখতে যুদ্ধ শুরু হবে কবে!
সাদি
॥ দেশের বর্তমান অবস্তুা বাঙালির অজানা নয়। বেশীরভাগ রাজনীতিকদের দুর্নীতি ও জুলুমে
অতিষ্ঠ বাঙালি। সন্ত্রাস-ধর্মান্ধতা-নৈরাজ্যের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় দেশের
মানুষ সরকার গড়ার জন্য ভোট দেয়। জাতি ধিক্কৃত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়ে একটা স্বচ্ছ,
সংবেদনশীল ও জনদরদি প্রশাসন সবসময় চেয়ে আসছে। পরিবর্তনের স্লোগান-দিন বদলের পালা-ডিজিটাল
বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বাংলার
মানুষ সেই নির্ভরশীলতা নিয়েই প্রশাসনের একক কর্তৃত্ব সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকার
গঠনের পর দেশবাসী যে স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা ও শুভেচ্ছার ডালি সরকারকে উজাড় করে দিয়েছে
তাতে পরিষ্কার-চিরকালীন আবেগপ্রবণ বাঙালি সরকারের মধ্যে ত্রাণকর্তার রূপ দেখতে চাচ্ছে
।
বাংলাদেশের
৪৪ বছরের শাসনে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, এমনকি নৈতিক কাঠামোতে আজ উন্নতির পথে পা
দিয়েছে।
যদিও
মরণাপন্ন রোগীর গরীব আত্মীয়পরিজন চিকিৎসার জন্য একের পর এক সরকারি হাসপাতালের দরজায়
মাথা ঠুকে বেড়াচ্ছেন। দেনার দায়ে একের পর এক গরীব শহরমুখী হচ্ছেন। পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
একাংশ নির্লজ্জভাবে ঘুষ নিচ্ছেন। সবাই জানে, এই দুর্দশার প্রতিকার একদিনে হবে না। কিন্তু
গণমানুষ পরিবর্তনের কিছু আভাস পেয়ে চুপচাপ আছে। তারা দেখতে চায়, প্রশাসনের অচলায়তন
ভালোভাবে নড়েচড়ে বসুক। অকালে মৃত্যুর হার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে সাফাই শুনতে চায় না,
প্রতিকারের পথ ও পদ্ধতি দেখতে চায়।
সরকারে
দলতন্ত্র অব্যাহত। নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর হামলাকারী ব্যক্তিদের নামঠিকানা জানা থাকলেও
পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকছে। পরিতাপের বিষয় এই প্রশাসনিক অদক্ষতা ও অদূরদর্শীতা
আবার পুরানো পাপীদের ফিরে আসার পরিস্থিতি তৈরি করে দিচ্ছে। তাই এর সংস্কারের
দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরাও এর দায়ভার এড়াতে পারবেন না।
নৃশংসতা
বাড়ছে। তা নিয়ে থানা-পুলিশ, মামলা-মোকদ্দমা বহু হয়েছে, এখনও হচ্ছে। অন্যদিকে, গত তিন
দশকে বিশ্বায়ন ও ভোগবাদের তাড়নায় সামাজিক প্রতিষ্ঠার লৰ্যে সাধারণ জনজীবনে ইঁদুরদৌড়ে
যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তারই অন্যতম ও অনিবার্য পরিণতিতে ঘরে ঘরে বেড়েছে
মানসিক পীড়ন। এই পীড়নের প্রধান হোতা এলাকাস্তু রাজনীতিকরা। বর্তমানে সমাজ গবেষকদের
ভাবিয়ে তুলছে তা হলো, নিগ্রহের ঘটনার মধ্য থেকে উঠে আসা হিংস্রতা, নৃশংসতা, নির্মমতার
ছবি!
যারাই
এই জাতীয় অপরাধ করছে সকলকেই সমাজবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে শাসিৱর কাঠগোড়ায় তোলা উচিত।
খুন-ধর্ষণ আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও নতুন নয়। কিন্তু, আজ এগুলোর
মধ্যে, হিংস্রতা, নৃশংসতার ভয়াবহতা অনেক অনেক বেড়ে গিয়েছে। হিংস্রতা আর নৃশংসতা দুটি
ক্ষেত্রেই অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে প্রশাসনের আরো কঠোর না হওয়ায় সমাজ বিজ্ঞানীদের বিস্মিত
করছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যারা ওইভাবে খুন করতে পারে বা যারা একজন মানুষকে তার পরিবারের
সামনে নৃশংসভাবে মেরে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা না করার জন্য ডাক্তারকে হুমকি দেয়,
তারা আমাদের সমাজের বা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারে? মনুষ্যত্বের ন্যূনতম শর্তেও
কি তাদের মানুষ বলা যায়?
অপ্রিয়
হলেও সত্য রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন কিছু রাজনৈতিক নেতানেত্রী আছেন যারা ওই জঘন্য কাজের
সমর্থনে ওদের হয়ে খোলাখুলি দাঁড়াচ্ছেন। ওদের নৃশংসতা, হিংস্রতাকে ইন্ধন যোগাচ্ছেন।
এ যাবৎ প্রকাশ্যে সকলেই ‘ওরা সমাজবিরোধী’, ‘ওরা আমাদের কেউ নয়’ বলছেন এবং ঘটনা ও তাতে
জড়িতদের অকুন্ঠ ‘নিন্দা’ করে এসেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। আবার রাতের আধারে ক্ষমতার
লোভে তাদেরকে লেলিয়ে দেবেন সন্ত্রাসের পথে। ‘ওরা’ ছিল, আছে, থাকবে এবং পুলিশ ও আইনের
শাসনে কদাচিৎ ধরা পড়বে আবার আইনের ফাঁক দিয়ে টাকার জোরে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজের
সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যাবে।
এইখানেই
উঠে আসছে অনিবার্য একটি প্রশ্ন। যারা রাস্তাঘাটে রাজনীতির নামে মানুষ খুন করছে নৃশংসভাবে,
যারা ধর্ষণ করছে, তাদের কেবল সমাজবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করলেই সমস্যা মিটবে কীভাবে?
এদের বেশিরভাগের মুখেই তো কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের রং। সে-ই রংই তো তাদের রক্ষাকবচ।
সেজন্যই না, খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির কোনও ঘটনা ঘটলে, মূল বিষয়ের আগে উঠে আসে অত্যাচারিত
ও অত্যাচারীর রাজনৈতিক পরিচয়! সেই রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত
হয় প্রশাসনের কাছে। সমাজে ব্যক্তিমানুষ যেমন আর নিছক ব্যক্তি মানুষ নয়, একটা না একটা
রাজনৈতিক পরিচয়ে চিহ্নিত, ঠিক তেমনই ‘সমাজবিরোধীরা’ও রাজনৈতিক দলগুলোর কোনও না কোন
দলের রং মেখে বসে আছে। আজ পর্যন্ত এই ছবি কিছু বদলেছে বলে সাধারণ মানুষের উপলব্ধিতে
আসছে না। এই মুহূর্তে মানুষ তাই চাইছে, দলমত নির্বিশেষে সকলে বলুক, যে রঙের মুখই হোক-সমাজবিরোধীদের
একটাই পরিচয়, তারা সমাজ-বিরোধী। তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হোক প্রশাসন, দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি দিক আদালত, অমানবিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
শুরু হোক সমাজে এবং বর্তমান সরকার তার নেতৃত্ব দিক - এটাই জাতির প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা
পূরণে সকল পদক্ষেপে আপামর জনগণ সরকারের সঙ্গে
একাত্ম ছিল-আছে-থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন