বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০১৫

আমলা ও অযোগ্য রাজনীতিকরাই উন্নয়নের প্রতিবন্ধক



আমলা ও অযোগ্য রাজনীতিকরাই
উন্নয়নের প্রতিবন্ধক

সংলাপ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপৰ শক্তি ক্ষমতায়, সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী - কথাগুলো সত্য হলেও সচেতন মহলে বহুল প্রচলিত বাক্যটা হচ্ছে- ‘প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে জামাত-বিএনপি, যারা সরকারের সকল ভাল ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে’।
সরকার দলীয় কোনো কোনো নেতার আঞ্চলিকতা ও জামাত-বিএনপির সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে দুর্নীতিপরায়ণতা, অদূরদর্শিতা, জনবিচ্ছিন্নতা আবার কখনো বা তাদের অযোগ্যতার সুযোগ নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের এজেন্টরা। অত্যন্ত চতুরতা ও দৰতার সাথেই স্বাধীনতাবিরোধীর এজেন্টরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছে। দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য হচ্ছে, যে সব অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবান মানুষদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ তথা জনযুদ্ধে এদেশের যেসব পরিবারের মানুষেরা সেই সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল তাঁরা বা তাঁদের উত্তরসূরিরা এদেশে সঠিকভাবে পুনর্বাসিত হয়নি। পক্ষান্তরে, স্বাধীনতার সুফল ও সুযোগ-সুবিধা যেমন-চাকুরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ৰেত্রে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছে স্বাধীনতা-বিরোধী অথবা সুযোগ-সন্ধানী তথা দুর্বল-চিত্তের লোকেরা এবং তাদের বংশধরেরা। ৭১’এ এদেশের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের আত্মাহুতির কারণে সার্বিক অঙ্গণে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা আজও পূরণ হয়নি, ৭৫-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগ সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অনেক বেশি পুষ্ট হয়েছে। অপরদিকে, হিসেব করলে দেখা যায় যে, স্বাধীনতার ৪৩ বছরের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়  থেকেছে ১৬ বছরের কিছু বেশি সময়। বাকী ২৮ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের মধ্যে ২০০৭-এর ওয়ান-ইলেভেনের সরকারটি ছাড়া অন্যদের সময়ে দেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটিই নিষিদ্ধ রাখা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাখা হয় অচ্ছুৎ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সুফলভোগী জিয়াউর রহমানের আমলে দেশের হাজারো মুক্তিযোদ্ধা এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সমর নায়কদেরকে ফাঁসিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল। যুদ্ধের পর থেকে শুরু করে অধিকাংশ সময় পাকিস্তানফেরত সামরিক অফিসার এবং যুদ্ধে না যাওয়া বেসামরিক আমলারাই ছিল এদেশের প্রশাসনের প্রধান কর্তাব্যক্তি। এসব কারণে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ৰমতায় আসলেও বিভিন্ন সৱরে তাদের সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা এখনো অনেক কম। আবার, তাদের সময়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে জামাত-বিএনপির লোদেরকে চাকুরি দেয়া হয়েছে-এমন ঘটনাও কম নয়। কেননা, আওয়ামী লীগকে যারা ভোট দেয় তাদের অনেকরই অর্থের বিনিময়ে চাকুরি নেয়ার সঙ্গতি বা মানসিকতা-কোননোটাই অনেকের থাকে না।
বর্তমান সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লৰাধিক পদ শূন্য পড়ে থাকলেও সেখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না, এমনকি বিভিন্ন সময়ে খোদ্‌ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়নের গতিও নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অতীব মন্থর করে রাখা হয়েছে। অবস্থাটা অনেক ক্ষেত্রে এ রকম, কোনো মতে শেখ হাসিনা-নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যক্রম স'বির করে রাখা, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কোনো মতে সরকারের পতন ঘটাতে পারলেই হলো, তখন ওইসব পদে রাতারাতি জামাত-বিএনপির সমর্থকদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ- ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের এই সময়ে জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখার জন্য সরকারি যে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি- যে প্রতিষ্ঠানটির পর্দায় ফুটে উঠতে পারে প্রশাসনের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি, সারা দেশে জনগণের সাথে স্থাপন করতে পারে সেতুবন্ধন, সে প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি সরকার। প্রশাসনে এখনো সকল ৰমতার মালিক বিএনপি-জামাতের আমলের নিয়োগপ্রাপ্তরাই-যারা সরকার ও প্রশাসনের ভেতরে থেকে সরকারের বিরোধীশক্তির এজেণ্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, নানাভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজেদের আখের গুছাচ্ছে।  বিটিভি সম্পর্কে দৈনিক জনকন্ঠ গত ১৩ই মার্চ ‘অস্তাচলে বিটিভি’ শিরোনামে লিখেছে, ‘দীর্ঘ দিন এখানে কোনো নতুন নিয়োগ নেই। সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর চেয়ে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে বিটিভি। ...২০০৭ সালে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত একজন মহাপরিচালক (যিনি এর আগে দীর্ঘদিন বার্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন) দলীয় বিবেচনায় ১১ জন প্রযোজককে বার্তা বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। কোন সংবাদ যাবে, আর কোনটি যাবে না-এটি থাকে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। এই নিয়োগপ্রাপ্তরা এখন কৌশলে সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে কর্মকা- পরিচালনা করছেন। বিএনপি-জামায়াতের আদর্শের অনুসারী এক নির্বাহী প্রযোজক সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।...  বার্তা বিভাগে আধিপত্য ভোল পাল্টানো জামায়াত-বিএনপি আমলের লোকজনের। খোদ তথ্যমন্ত্রীও কবুল করলেন নৈরাজ্যের কথা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এটা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটিতে এমন আবর্জনা জমেছে। নতুনভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। সেই অভাব মেটাতে নতুন করে প্রায় দেড়শ’ জনশক্তি বিটিভিতে নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত কর্মতৎপরতা চলছে’। নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে এমন ধীরগতি ও অচলাবস্থা অনেক প্রতিষ্ঠানেই বিরাজ করছে। এসব অপতৎপরতার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দূরদশির্তার পরিচয় দিতে না পারলে দেশের অগ্রগতির চাকা ধীর-সি'র হয়ে যেতে পারে।
সরকারের উদ্যোগেএখন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করে দেখা দরকার, কারা সরকার ও সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজে কারা বাধা সৃষ্টি করছে। ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান সরকারকে অচল করে দেয়ার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। স্বাধীনতার পর মার্কিন-সৌদি-পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে মোশতাক-চাষী-ঠাকুর চক্র বঙ্গবন্ধুর সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে উঠে পড়ে লেগেছিল। সরকারের ভেতরে বসে তাদের এজেন্ট হিসেবে এখনো কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলে যে কথা বাংলার-আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে তার বিরুদ্ধে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন