বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৪

সময়ের অপচয়ই সবচেয়ে বড় অপচয়



সময়ের অপচয়ই সবচেয়ে বড় অপচয়

আব্দুল্লাহ মাযরান ॥ হংকং একটি সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে দেখল যে, যদি পাহাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তা নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে পাঁচ সেকেন্ড সময় বেশি লাগবে আর যদি পাহাড় কেটে ভেতর দিয়ে রাস্তা নেয়া হয় তাহলে পাঁচ সেকেন্ড সময় কম লাগবে। কিন্তু পাহাড় কেটে রাস্তা করতে রাষ্ট্রের ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। পাঁচ সেকেন্ড সময় বাঁচানোর জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে হংকং সময়ের মূল্য দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ১০০ কোটি কেন, পৃথিবীর সব সম্পদের বিনিময়েও ১ সেকেন্ড সময় কেনা যায় না। যে ব্যক্তি বা জাতি সময়ের মূল্য দেয় না সময়ও তাকে মূল্য দেয় না। সে চিরকালই থাকে দরিদ্র।
সময় এক অদ্ভুত প্রতারণার খেলা করে আমাদের সাথে। প্রতিদিন জীবনের হিসাবের খাতায় ৮৬৪০০ সেকেন্ড জমা করে আবার নিয়ে যায়। অব্যবহৃত একটি সেকেন্ডও জমা থাকে না- হারিয়ে যায় মহাকালের অতল গহ্বরে। সময় একবার যায় তো চিরকালের জন্যই যায়। তাই বুঝতে হবে সময়ের মূল্য।
কিন্তু সময়ের মূল্য বোঝা কী সহজ? ১মিলিসেকেন্ডের মূল্য যে কী তা বুঝতে পারে কেবল সেই প্রতিযোগী যে ১মিলিসেকেণ্ডের জন্য জিততে পারলো না অলিম্পিকে স্বর্ণপদক। যে ব্যক্তি ১সেকেন্ডের ব্যবধানে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলো, সে বুঝতে পারে ১সেকেন্ডের মূল্য। ১মিনিটের জন্য যে ট্রেন মিস করেছে সে বুঝে ১মিনিটের মূল্য। পরবর্তী ট্রেনের জন্য যে ১ঘন্টা অপেক্ষা করেছে সে বুঝে ১ঘন্টা কত মিনিটে হয়! কষ্ট ও ক্ষতির পর মানুষের বুঝ হয়। বুঝ কেউ কাউকে দিতে পারে না- জীবন দিয়ে অর্জন করতে হয়।
সময়ের গণ্ডিতে বাঁধা আমাদের জীবন। প্রত্যেক সেকেন্ড জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিবস, মাস আর কিছু বছরের সমষ্টি হচ্ছে আমাদের জীবন। সময়ই জীবন। তাই সময়ের অপচয়ই সবচেয়ে বড় অপচয়। আমরা সময়ের অপচয় করি- ট্রাফিক জ্যামে, টিভি দেখে, মোবাইলে কথা বলে, কম্পিউটার গেমস্‌, আড্ডা ইত্যাদিতে। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয়জীবনে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সময়ের অপচয় রোধ করতেই হবে।
চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র সবকিছু সময়ের মূল্য দিয়ে চলে। সূর্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে উদিত হয়, অস্ত যায়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি দিন এই বলে ঘোষণা করতে থাকে যে, যদি কেউ কিছু করতে চাও তাহলে আজই তা করে নাও। যদি আজ নয় তাহলে কখন? আমি আর ফিরে আসবো না। আমি বড় নিষ্ঠুর। আমি কারো প্রতি সদয় হই না। তবে আমার সঙ্গে যে সদ্ব্যবহার করবে সে কখনও বঞ্চিত হবে না।
এখনই একমাত্র সময়। যদি এখন নয়, তাহলে কখন। তখন, কখনও আসে না জীবনে। এখনই সময় নূতন কিছু করবার। আত্মবিশ্বাস শক্তির প্রমাণ দেয়ার এখনই সময়। জড়তা, আলস্য ত্যাগ করে এগিয়ে যাবার এখনই সময়। এখনই সময় নূতন করে শপথ নেয়ার। নিজের সংকল্পকে বাস্তবায়িত করার সময় বয়ে যায়। নবরূপে উত্তরণের সময় বয়ে যায়।
‘ঘুমিয়ে আছে যারা, হয়ে আপন হারা, এখনই সময় জাগিয়া ওঠার নূতন জীবনের লাগি’।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন