বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

সময়ের সাফ কথা.... আগষ্ট জাগ্রতচিত্ত হওয়ার ডাক দেয়



সময়ের সাফ কথা....
আগষ্ট জাগ্রতচিত্ত হওয়ার ডাক দেয়

সংলাপ ॥ আবারও এসেছে আগষ্ট মাস। বাঙালির জাতীয় শোকের মাস। ১৯৭৫ থেকে ২০১৬, আজ থেকে ৪১ বছর আগে বাঙালি জাতির জীবনে এসেছিল এই মাস-১৫ই আগষ্টে জাতি স্ব-পরিবারে হারিয়েছিল জাতির পিতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীনতা অর্জনের অর্থাৎ, ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয়ের ৩ বছর ৮ মাস মাত্র পার হয়েছে। ১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের তিন বছর কিছু দিতে পারবো না। আরো তিন বছর যুদ্ধ চললে, তোমরা যুদ্ধ করতে না’ (উত্তর, ‘করতাম  করতাম...)’ তাহলে মনে কর যুদ্ধ চলছে, তিন বৎসর যুদ্ধ চলবে। সেই যুদ্ধ দেশ গড়ার যুদ্ধ। অস্ত্র হবে লাঙ্গল আর কোদাল।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখেছিলেন। সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক সকল স্বীকৃতি আদায়সহ ৭৪’এর বন্যার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে দেশ যখন অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারের হত্যা করা হলো। সফল হয়েছিল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের অপচেষ্টা। তারপর একে একে হত্যা করা হলো জাতীয় চার নেতাকে, মুক্তিবাহিনীর প্রধান প্রধান অধিনায়কদেরকে। দেশকে নিয়ে যাওয়া হলো পাকিস্তানী ধর্মান্ধ ভাবধারায়। বিসর্জন দেয়া হলো মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল অর্জনকে। এর সবই করা হয়েছিল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। দেশ পিছিয়ে পড়ে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মুশতাকচক্র সেদিন বঙ্গবন্ধু সরকার ও তাঁর দলের মধ্যেই ঘাপটি মেরেছিল, তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর।   
৪১ বছর পর আগষ্ট মাস আবারো বাঙালির দ্বারে। অনেক কঠিন ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে বর্তমানে দেশের সফল ও অভিজ্ঞ কাণ্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ বঙ্গবন্ধুরই রক্তের উত্তরাধিকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শক্ত হাতেই তিনি ধরেছেন দেশের হাল। আর তাই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতা-বিরোধী  ধর্মান্ধ, ধর্ম-ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র যে এক মূহুর্তও থেমে নেই তা সচেতন মানুষ কারোরই অজানা নয়। এই ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো দিনই চায় না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক্ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। তাই এদের সম্পর্কে সজাগ থাকাই আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ, বঙ্গবন্ধু সরকার ও দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা গুটি কয়েক যড়যন্ত্রকারী দেশ ও জাতির জন্য যে কী ভয়াবহ অবস্থা ডেকে আনতে পারে ১৯৭৫’এর ১৫ই আগষ্ট তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ইতিহাস স্বাক্ষী, ১৫ই আগষ্টের পূর্ববর্তী ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশ যখন সঠিক পথে চলছিল ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এর কয়েকমাস আগে ১৯৭৫-এর ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত র‌্যালীতে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ৬৫ হাজার গ্রামে বিভিন্নমুখী সমবায় সমিতি পদ্ধতি চালু করবে। সকল সাবডিভিশনকে প্রশাসনিক জেলায় উন্নীত করা হবে। প্রচলিত জেলাসমূহ প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে বিলুপ্ত হবে এবং থানা ও জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের তারিখ, মুহাম্মদ হাবিুবর রহমান, পৃষ্ঠা-৮৯)। তারই পথ ধরে বর্তমান সরকার জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সূদুরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল। কিন্তু সব কিছুই নির্ভর করছে ষড়যন্ত্রকারীদের কালো থাবা থেকে দেশকে রক্ষার ওপর।  
’৭৫ সালে ষড়যন্ত্রকারীদের সফলতা এটাই ছিল যে, দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত সকল পরিকল্পনা ওরা নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছিল। তারা এতটাই সফল ছিল যে, ’৭৫-এর নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ বা প্রতিকার করার মতো কাউকেও সেদিন পাওয়া যায়নি। ১৫ আগষ্টেই রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার সদস্য এবং তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মুশতাক। দেশে সামরিক আইন জারি করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিপরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১০ জন মন্ত্রী এবং ৬ জন প্রতিমন্ত্রী পুনর্বহাল হয়। এমন জঘন্যতম ও লজ্জাজনক ঘটনা বাংলার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে চিরকাল।
সেই ষড়যন্ত্রকারীদের দোসর এবং তাদের বশংবদরা আজও মিশে আছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, প্রশাসনে, সরকারি দলে। বাহ্যিক অবস্থাটা এমন যে, প্রশাসনের কোথাও এখন সরকারবিরোধী লোক খুঁজে পাওয়া যায় না! আর আওয়ামী লীগের ভিতরে, বিভিন্ন স্তরে ঢুকে পড়েছে অনেক স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তান, জামাত-বিএনপির এজেন্ট হিসেবে। অথচ সুযোগ পেলেই ওরা ওদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করবে। এইসব কপটদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার ক্ষেত্রে সরকার যতটুকু সফল হবে-ততই দেশ ও জাতির মঙ্গল। ২১০৬ সাল বাংলার ভাগ্যাকাশে আবারও এসেছে সেই বার্তা নিয়ে-এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর, তাজউদ্দীনের, এই বাংলা সাধক নজরুলের, শেরে বাংলার, মওলানা ভাসানীর, সোহ্রাওয়ার্দীর। বিশ্বাসঘাতকদের স্থান এখানে কখনো হয়নি, হবেও না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন