তরুণদের নেতৃত্বেই হতে পারে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
সংলাপ ॥ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে
একটি আধুনিক, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বার বার
ব্যক্ত করছেন। কিন্তু দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে পারে যে তরুণরা তাদের বিরাট অংশ এখন অন্ধ
রাজনৈতিক চর্চায় মত্ত, দিশেহারা।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সুস্থ ধারার রাজনীতির
অনুপস্থিতি ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকা- কখনোই এ প্রযুক্তি যুগের তরুণ সমাজের কাছে কাম্য
হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ
হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তবে দেশের ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যতও অন্ধকারে পতিত হবে
বৈকি।
যদি আমাদের তরুণ সমাজ প্রতিহিংসা, পরনিন্দা,
সমালোচনার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সহনশীলতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহাবস্থান ও পরোপকারের
নীতি এবং শিক্ষা গ্রহণ করে সুস্থধারার রাজনীতির উন্মেষ ঘটাতে পারে তাহলেই কেবল এদেশে
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
তরুণদের একটি শ্রেণী ধীরে-ধীরে কিভাবে
উচ্ছৃংখলতা ও অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে তা দৈনিক পত্র-পত্রিকা খুললে সহজেই অনুমান
করা যায়। বখাটেপনা, অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপ, অপ-সংস্কৃতির প্রভাব, মাদক, চুরি,
ছিনতাই ইত্যাদি বহু রকমের অন্যায় কর্মকা- আজ তরুণ সমাজের দৈনন্দিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এভাবে আর কত দিন? অভিভাবক মহলের দুঃশ্চিন্তা,
উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার দিন কবে শেষ হবে তা হয়তো কারোরই জানা নেই। বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন
ও মাদকাসক্তির ভয়াল থাবা থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় দূর
করা যাবে না।
পরিবেশ মানুষকে যে শিক্ষা দেয় পাঠ্যপুস্তক
তা দিতে পারে না। চারপাশের পরিবেশ সমাজের প্রতিটি নাগরিককে প্রভাবিত করে। তাই, সমাজে
যার যার অবস্থান থেকে বখাটেপনা সহ সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ়
প্রত্যয় নেয়ার এখনই সময়। নতুন একটি সভ্যতা বিনির্মাণের লক্ষ্যে তরুণ ও ছাত্র সমাজকে
গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, নীতিহীন শিক্ষার কোন মানে হয়
না। যে শিক্ষায় কোন নীতি নেই এমন শিক্ষা ও জ্ঞান আমাদের দরকার নেই। বিদেশী সংস্কৃতি
ও সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান লাভ করতে হবে ঠিকই কিন্তু যেটুকু ভাল কেবল সেটুকুই
আমরা গ্রহণ করতে পারি, অন্যথায় নয়। আমাদের নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা, মূল্যবোধ
ধরে রাখা এবং বিদেশী অপ-সংস্কৃতির চর্চা পরিত্যাগ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে
যেতে হবে।
সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের
সুনজর রাখা, সুশিক্ষা প্রদান, ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর গুরুত্বারোপ করার মাধ্যমে তাদেরকে
একটি পরিচ্ছন্ন জীবনের ভীত গড়ে দিতে হবে। যাতে বড় হয়ে কোন ছেলে-মেয়ে অন্যায় পথে পা
না বাড়ায়।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের
অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ
সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। একজন কর্মক্ষম শিক্ষিত বেকারের চাকরি প্রাপ্তি
অনেক বেশি জরুরি। কেননা, অর্থ কষ্টের কারণে কিংবা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভের
জন্য অনেক তরুণ বিপথে পা বাড়ায় ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাই প্রয়োজন,
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চাকরি প্রাপ্তির সমস্যার দিক বিবেচনায় নিয়ে চাকরিতে প্রবেশের
বয়সসীমা বৃদ্ধি করা। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিভাগ/জেলা পর্যায়ে বৃহৎ/ মাঝারি /ছোট
শিল্প-কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ে বেকারদের কর্মসংস্থান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন