প্রজন্মের শিক্ষা ভাবনা
সুহৃদ মান্নাফি ॥ মানব প্রজাতি এগিয়েছে
বহুদূর। বিজ্ঞানের নানামূখী আবিষ্কার মানবপ্রজাতিকে উন্নতির চূঁড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে
বলে চারিদিকে রব উঠেছে। বিশেষ করে কম্পিউটার ও মোবাইল প্রযুক্তি মানব প্রজাতিকে উন্নতির
এক বিস্ময়কর অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে। চারিদিকে উন্নতির ছোঁয়া। স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দে
বিভোর। কিন্তু সে উন্নতি আর আনন্দের চিত্রটিকে একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা
তার অন্তসারশুণ্য অবস্থার চিত্রটি দেখতে পাবো। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে
আমাদের এই সোনার বাংলার রুক্ষ ও প্রাণহীন দশা সহজেই ধরা পড়ে। প্রযুক্তির কল্যানে শিক্ষা
ব্যবস্থা বহুদূর এগুলেও আমরা বিশেষ করে বাঙালির নতুন প্রজন্ম যে দিশাহীন তা স্পষ্ট।
যে প্রজন্ম গত হয়েছে তাদের কথা টেনে এনে লাভ নেই। যে প্রজন্ম আজও দেশ-দেশের মানুষকে
গড়ার দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে পড়ন্ত বেলার দিকে হেলে পড়েছেন তাদের কথা একটু ধরা যাক।
আর যে প্রজন্ম পরিপূর্ণভাবে এই বাংলার সমাজ, বাংলার বাঙালিকে গড়ার দায়িত্বে নিয়োজিত
তাদের কথা পূর্ণভাবে ধরতে হবে, কারন বর্তমান প্রজন্মের এই দিশাহীন অবস্থার পেছনে তাদের
ব্যর্থতা রয়েছে। আর যে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এই দেশ ও এই দেশের মানুষকে গড়বে বলে তাদের
নিয়েই হওয়া উচিত আমাদের বিশেষ চিন্তা-ভাবনা।
বর্তমান প্রজন্ম যারা ভবিষ্যতে আমাদের
হাল ধরবে তাদের জন্য আমাদের সত্যিই কী কোন পরিকল্পনা রয়েছে? কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা
তাদের? নতুন প্রজন্মের জন্য আমাদের ভাবনা কী সঠিক আছে? ভাবনা যদি থাকে তবে তা কতটা
বর্তমান সময় উপযোগী? ভাবনা যদি থাকে তবে তা কতটা বাস্তব সম্মত? ভাবনা যদি থাকে তবে তা কতটা মানবিক-মানবিকতা ও মানবতা সংশ্লিষ্ট ? এই
ভাবনা থেকে আমরা আমাদের বর্তমান ও নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর সু-পরিকল্পিত ও বর্তমান
সময় উপযোগী শিক্ষা প্রদান করতে পারছি কী? যদি না পারি তবে দিশাহীন এই প্রজন্ম কোন দিকে
নিয়ে যাবে তাদেরকে, এই সোনার বাঙলাকে? আমরা যদি এখনই সজাগ ও সচেতন না হই তবে তার পরিনতি
কী হবে? এককথায়, যে মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এই বাঙালি জাতির উত্থান তা ব্যর্থ
হবে।
বাঙালির নতুন প্রজন্ম যে ইতোমধ্যেই দিশা
হারিয়েছে তা বিগত কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহ দেখলে সহজেই ধরা পড়ে। কি ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক
শিক্ষার ফাঁদে পা দিয়েছে এই প্রজন্ম তা নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে বিকৃত
ধর্মীয় শিক্ষা যে নতুন প্রজন্মের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে তা এদেশের শুধু নয়, সারাবিশ্বের
নিকট এখন স্পষ্ট। সারাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ভাবনা আপাতত থাক। নিজ দেশের আপন প্রজন্মের
ভাবনা যে এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিগত ২/৩ বছর ধরে এদেশে ধর্মের
নামে যে চরম উগ্রতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ছবি মানুষ দেখেছে বিশেষ করে কয়েকদিন আগে
ঘটে যাওয়া গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে
নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। বিশেষ করে বিকৃত ধর্মীয় শিক্ষা যেন এই প্রজন্মের আর
কাউকে বিপথে ঠেলে দিতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। পরিবারের
বাবা-মা-গুরুজন থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মক্তব, মাদ্রাসা, মসজিদ,
মন্দিরসহ ধর্মীয় শিক্ষার যত প্রকার স্থান রয়েছে সে সকল স্থানে শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত
সকল মহলকে সচেতন হতে হবে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষায় কি পড়ানো হচ্ছে, কে পাঠ্যসূচী
প্রণয়ন করছে, আদৌ পাঠ্যসূচীতে সন্নিবেশিত বিষয়াবলী প্রকৃত ধর্মীয় বিষয়ভুক্ত- না কি
বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক মনগড়া বিষয় সন্নিবেশ করা হয়েছে - সে সব প্রত্যেকটি
বিষয়ে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ধর্মমন্ত্রণালয়কে
এ ব্যাপারে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই ধর্মে বহুমত ও পথের ধর্ম শিক্ষা
রোধ করতে না পারলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবার সম্ভাবনা শতভাগ এবং এর ফলাফল কি
হতে পারে তা বোধ করি কাউকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না। ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশনার
ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকার নিয়ম নীতি রয়েছে বলে মনে হয় না। যে যার মতো
করে ইসলামের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে ইসলাম ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশ করছে। মনগড়া, যুক্তিহীন,
সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে তথাকথিক ধর্মজীবিরা ধর্মের বারোটা বাজিয়ে
নিজেদের পকেট ভারী করছে। পাশাপাশি শান্তির ধর্মের অশান্ত রূপ দেখে আবারো জাহেলিয়াত
যুগে প্রবেশ করছি বলে মনে হচ্ছে। এ দেশ, এ মানব সমাজ বিশেষ করে বাঙালির সোনার বাংলাকে
উগ্র ধর্মীয় ও সন্ত্রাসী শিক্ষার হাত থেকে এবং আমাদের এই প্রজন্মকে বাঁচাতে সর্বমহলের
সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য সময় উপযোগী শিক্ষা
ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলে আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে যার একটু
নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন