শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

এ আবার কোন শান্তি (ইসলাম)!!!!

এ আবার কোন শান্তি (ইসলাম)!!!!

ড. আলাউদ্দিন আলন ॥ কোন একটি শব্দ যখন একটি জাতির ভাষায় যুক্ত হয় তখন নিঃসন্দেহে সে শব্দটির একটি গভীর তাৎপর্যময় অর্থ থাকে। সে অর্থের ব্যাপকতা থাকে। আর থাকে নান্দনিক সৌন্দর্য। শব্দটির আভিধানিক অর্থ, পারিভাষিক অর্থ, ব্যবহারিক অর্থসহ যত ধরনের অর্থ থাকে সে সকল অর্থ সমষ্টির গভীরে প্রবেশ করে অর্থটিকে জেনে ও বুঝে নিতে হয়। বিশেষ করে কোন একটি বিদেশী শব্দ যখন কোন জাতির ভাষায় স্থান করে নেয় তখন সে শব্দটির সার্বিক অর্থ, অর্থের গভীরতা ও ব্যাপকতা ও সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা থাকা একান্ত প্রয়োজন। নয়তো সে শব্দের প্রয়োগিক দিকটি অর্থহীন ও ঠুনকো হয়ে পড়ে। বাংলা ভাষাসহ সারাবিশ্বের সকল ভাষায় ‘ইসলাম’ শব্দটি আরবী ভাষা হতে সরাসরি ব্যবহার হচ্ছে। মূলত একটি ধর্মকে বুঝাতে এ শব্দের বিশ্বময় বহুল ব্যবহার। প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে নবী মুহাম্মদ (সা.) এঁর নিকট অবতীর্ণ আল কুরআনে আরবী ইসলাম শব্দটির যাত্রা যা একটি ধর্ম হিসেবে মানবজাতির জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। সারাবিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ ‘ইসলাম’ শব্দটিকে ‘ইসলাম’ হিসেবেই গ্রহণ করেছে। কেউই এ শব্দটিকে নিজেদের পারিভাষিক শব্দ হিসেবে নিজ ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেনি।
বিশেষ করে বাঙালির ভাষা বাংলায়-আরবী ‘ইসলাম’ শব্দ ‘ইসলাম ধর্ম’ নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর বাঙালি জাতি তাদের মহান নবী মোহাম্মদ (সা.) কে স্বীকৃতি, তাঁর প্রচারিত ধর্মের স্বীকৃতি - সর্বোপরি আল কুরআনে আল্লাহ্র নির্দেশ ‘ইসলাম ধর্ম’ কে নিজেদের ধর্ম হিসেবে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মেনে নিয়েছে। ৯০ ভাগ বাঙালি যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আজ আরেকটি আরবী শব্দ মুসলিম কিংবা মুসলমান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তারাও কখনো নিজ ভাষায় তথা বাংলা ভাষায় এ শব্দ দুটির অনুবাদ করে নিজেদের প্রকাশ ও প্রচার করেন না। ফলে ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলিম’ শব্দের আবির্ভাবের শুরু থেকে আরবীয়রা যেমন হানাহানি ও রক্তপাত থেকে নিজেদের নিভৃত করতে পারেনি, তেমনি বাঙালি জাতি ১২০০ বছর ধরে ইসলাম ও মুসলিম শব্দ ব্যবহার করতে করতে আজ জাহেলিয়ার যুগের ধ্বংসাত্মক হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। আর এর পেছনে একটি অন্যতম কারণ বাংলা ভাষায় ইসলাম ও মুসলিম শব্দের অনুবাদ অর্থের ব্যবহার না থাকা এবং এ ধর্মের প্রকৃত সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হওয়া।
আমরা সবাই জানি আরবী ‘ইসলাম’ শব্দের বাংলা ভাষায় সহজ অর্থ হচ্ছে ‘শান্তি’। আরবী ‘দ্বীন’ শব্দের অর্থ সংস্কৃতিতে ধর্ম আর বাংলা ভাষায় ধর্ম শব্দের সহজ অর্থ ‘ধারণ করা চরিত্র’। আর যিনি ‘দ্বীন ইসলাম’ অর্থাৎ শান্তির ধর্ম বা শান্তির চরিত্র ধারণ করেছেন আরবী ভাষায় তার পরিচয় ‘মুসলিম’ যার বাংলা ভাষায় পরিচিতি ‘শান্তির চরিত্র ধারণকারী’ হিসেবে। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজে শান্তির চরিত্র ধারণ করেছেন তিনিই মুসলিম এবং তার ধর্মের নাম ইসলাম (শান্তি)। আরবী ভাষায় ইসলাম শব্দ বাঙালির চিন্তায় যতটা প্রভাব ফেলেছে তার চেয়ে হাজার লক্ষগুণ বেশি প্রভাব ফেলতে পারতো ‘শান্তি’ শব্দটি। কারণ কোন বাংলা ভাষা-ভাষীকে ‘শান্তি’ কি তা বুঝিয়ে বলার কোন প্রয়োজন পড়ে না। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছেলে-বুড়ো সব বাঙালিই বুঝেন শান্তি কি জিনিস। আর এই শান্তির চরিত্র বাঙালি ১২০০ বছরে ধরে লালন-পালন করে আসছে যা তারা শান্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) এঁর রেখে যাওয়া ‘মুহাম্মদী ইসলাম’ থেকে পেয়েছেন। আরবী ‘মুহাম্মদী ইসলাম’ শব্দটিরও বাংলা ভাষায় অর্থ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। আর তা হলেই শান্তির দূত (ইসলামের নবী) এঁর রেখে যাওয়া দ্বীন তথা ধর্ম তথা চরিত্রের প্রকৃত অর্থ বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। আরবী ‘মুহাম্মদ’ শব্দের বাংলা ভাষায় অর্থ হচ্ছে ‘প্রশংসিত’। আর আরবী ‘ইসলাম অর্থ ‘শান্তি’। সুতরাং ‘মুহাম্মদী ইসলাম’ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘প্রশংসিত শান্তি’। মুহম্মদী ইসলামের ধারক-বাহক মুসলমানের বাংলা ভাষায় পরিচয় হচ্ছে ‘প্রশংসিত শান্তির চরিত্র ধারণকারী ব্যক্তি’। যে ব্যক্তির কর্ম তার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রশংসিত হয় সেই ব্যক্তিই মুসলিম। সুতরাং কে মুসলিম আর কে মুসলিম না তা বোধ করি বাংলা ভাষাভাষীদের আর বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন নেই।
যারা বাংলার মানুষকে মুসলমান বানানোর জন্য সন্ত্রাসী হয়েছেন, সন্ত্রাসী বানাচ্ছেন নিজেদের অধর্ম ও কুধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি - পাঁচ হাজার বছরের বাঙালি জাতি, বাংলার সংস্কৃতি, শেকড় অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে, উপড়িয়ে ফেলবেন - সে চেষ্টা বৃথা; অশান্তি তৈরি করতে পারবেন সাময়িক - তবে সফল হবেন না কখনো। বাঙালি প্রায় ১২০০ বছর ধরে শান্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এঁর রেখে যাওয়া প্রশংসিত শান্তির ধর্ম তথা মুহাম্মদী ইসলাম পালন করছে। এক-দুই-তিন করে আজ এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ শান্তির চরিত্র ধারণ করে মুসলমান নাম ধারণ করে তাদের মানবজীবন অতিক্রম করে চলেছে।
আপনারা নতুন করে কোন শান্তি (ইসলাম) এ জনপদে প্রতিষ্ঠা করার জন্য গোপনে-প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হয়ে নিরীহ মানবজাতিকে হত্যা করছেন ঘৃণ্য কায়দায় তা আমরা ভালোই বুঝতে পারছি। আপনাদের কোন পথ নির্দেশ এই শান্তিপ্রিয় (ইসলাম প্রিয়) জাতির প্রয়োজন নেই। আপনারা শান্তির দূতের (ইসলামের নবীর) সুমহান শিক্ষাকে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারের আশায় বিকৃত করে আর ব্যবহার করবেন না। বুঝতেই পারছেন আপনারা এ জাতিকে অশান্তির জাহান্নামে নিক্ষেপ করার ষড়যন্ত্র ব্যতিত আর কিছুই দিতে পারছেন না। আপনাদের অসৎ ধর্ম, অসৎ কর্ম, অসৎ উদ্দেশ্য এ পবিত্র জমিনে কখনোই সফল হবে না। সাময়িক অশান্তি আর আতংকের সৃষ্টি করে নিজেদের সন্ত্রাসী-শয়তানী মনোভাবকে শুধু প্রকাশ করতে পারবেন। বিনিময়ে শান্তিপ্রিয় জাতি ও তাদের বন্ধুদের রক্তে আপনাদের হাত রাঙিয়ে পুরো জাতির অন্তরের ঘৃণা চিরকালের জন্য আপনাদের প্রাপ্তি হিসেবে সঙ্গী করতে পারবেন। তাছাড়া আর প্রাপ্তির কিছুই থাকবে না। যে কাল্পনিক স্বর্গের প্রত্যাশায় নষ্ট-ভ্রষ্ট জীবন ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন তা থেকে নিজেরা ফিরে আসুন, আমাদের সোনার ছেলেদের ফিরিয়ে আনুন, সোনার বাংলা গঠনের জন্য নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা সুন্দর চরিত্রকে কাজে লাগান। তবেই আপনি বাঁচবেন, আপনার পরিবার বাঁচবে, আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে। বাঁচবে এ সোনার বাংলা, বাঁচবে সোনার বাংলার সোনার মানুষ।
বিকৃত ইসলাম (শান্তি!!!) এর কথা বলে কোন লাভ নেই। এজিদের চরিত্র সবাই জানে। এজিদ ও তার বাহিনী কোন ইসলাম (শান্তি!) প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তা সবাই জানে। এজিদ আজ ঘৃণিত। এজিদ বাহিনী আজ ঘৃণিত। ইমাম হোসাইন আজ মুসলমানদের হৃদয়ের মনি। ইমাম হাসান আজ মুসলমানদের
চোখের মনি। কারবালায় শাহাদাৎ লাভকারীগণ সারা মুসলিম জাহানের সকলের প্রিয়মুখ। আর এজিদ ও তার দোসররা আজও ঘৃণিত মুসলমান সমাজে। আপনার যারা গোপনে এজিদের রূপধারণ করেছেন, প্রকাশ্যে এজিদ বাহিনীর মতো নিরীহ মানুষের মাথা কাটছেন ইসলামের! (শান্তির) নামে - তারাও তেমনি ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবেন পরিবারে, আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের পরিমণ্ডলে, সমাজে, রাষ্ট্রে - সর্বোপরি সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষদের কাছে।
আমরা শান্তিপ্রিয় (ইসলাম প্রিয়) বাঙালি মুসলিম। আমাদেরকে শান্তির ধর্ম শিখিয়েছেন সূফী সাধক অলি-আল্লাহ্গণ। শান্তির চরিত্র কিভাবে অর্জন ও ধারণ করতে হয়, তা আমরা বিগত ১২টি শতাব্দী ধরে শিখে আসছি, এখনও শিখছি। আমাদের নতুন করে ইসলাম তথা শান্তির বাণী এ রকম সন্ত্রাসী কায়দায় শেখানোর প্রয়োজন নেই। আপনাদের যারা মদদদাতা তাদের আমরা ভালো করেই চিনি। আপনারা কোন ফাঁদে, কিসের লোভে পা দিয়েছেন তাও আমরা জানি। সুতরাং আপনাদের প্রতি আহবান রইলো - ফিরে আসুন শান্তির সুশীতল ছায়াতলে। সন্ত্রাস করে, মানুষ হত্যা করে, বোমা মেরে, গলা কেটে, শান্তি তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয় না। মানুষকে প্রেম আর ভালোবাসা দিয়ে শান্তির পথে তথা ইসলামের পথে টেনে আনতে হয়। আর এটাই করেছিলেন শান্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর চরিত্রগুনে গুনান্বিত সূফি সাধক অলি-আল্লাহ্গণ। সূফি সাধক অলি- আল্লাহ্গণ-এর সাহচর্যে গিয়ে নিজেদের চরিত্র সুন্দর করে সাধারণ মানুষকে শান্তির পথ দেখান, তবেই ইসলাম প্রতিষ্টা পাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন