বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

পাগল আর পাগল নয়!


পাগল আর পাগল নয়!

সংলাপ আসলে পাগল কে? পাগলের সংজ্ঞা কী? বিজ্ঞানের জটিল সংজ্ঞায় না গিয়ে খুব সাদা মাটা ভাবে যদি বলি পাগল হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে স্রোতের উল্টো আচরণ করে অর্থাৎ ব্যক্তিটির চারিদিকের চলমান প্রচলিত ঝোঁক এর বাইরে এসে কেউ কিছু করে এবং তা নিঃসংকোচে প্রকাশ করে সেই পাগল যেমন ধরুন আমরা আমাদের লজ্জার স্থান ঢাকার জন্য সবাই কাপড় পরি এখন কেউ যদি কাপড় ছেড়ে লজ্জা স্থান উন্মুক্ত উলঙ্গ হয়ে সদর রাস্তায় নিঃসংকোচে হেঁটে বেড়ায় তাহলে আমরা তাকে পাগল বলি তাকে থুথু মারি টিটকারি দেই ঢিল ছুঁড়ি পরিবারের সদস্য হিসাবে অস্বীকার করি শিকল পরাই, সম্ভব হলে পাবনায় পাঠাই পাঠক একটি জিনিস এখানে বিবেচনার দাবি রাখে সেটা হচ্ছে এই ব্যক্তিটিকে এক হাজার উলঙ্গ মানুষের মধ্যে যদি ঢুকিয়ে দেয়া হয় তাহলে সে কিন্তু পাগল নয় বরং সেখানে যদি একজন তার লজ্জা সমূহ ঢেকে বস্ত্র পরিধান করে ওদের মধ্যে হেঁটে চলে তবে সেই কিন্তু বনে যাবে নির্ঘাত পাগল তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল? এখানে নির্দিধায় বলা যায় এই ব্যক্তি পাগল নয় এই ব্যাপারটি সংজ্ঞা তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে মানুষটির অনুপাত নগন্য তাই সে পাগল আবার উলঙ্গ মানুষের আড্ডায় কাপড় পরা লোকটি সংখ্যার অনুপাতে কম তাই উলঙ্গ মানুষের ভিড়ে লজ্জা স্থান ঢাকা লোকটি কিন্তু পাগল
একটু তলিয়ে দেখলে এমনও তো হতে পারে উলঙ্গ ব্যক্তিটি বহু দিন ধরে ভেবে ভেবে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে তার সমাজটা এতই কলুষিত যে সমাজের অধিকাংশ মানুষকে চিন্তা আচরণ সব মানব সমাজের বাইরে চলে গেছে অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে সবাই সমানে সমান এই তত্ত্বের বিচারে সে যদি চলমান সমাজে বিচরণকারী মানুষকে মানুষ না ভেবে অন্য কিছু ভাবতে পারে হতেও তো পারে আমরা ওই ন্যাংটা কে তো জিজ্ঞাসা করি নাই বা কারণ অনুসন্ধান করি নাই যে সে কেন অমন আচরণ করছে এমনতো হতেও পারে সে সমাজ বিশ্লেষণ করে করে অবাক হয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এই মানুষগুলোর সকল সংবেদনশীল অঙ্গসমূহ অকেজো হয়ে গেছে যে অবস্থানে গেলে মানুষকে অনুভূতিহীন মানুষ বলা হয়ে থাকে নইলে এমন অন্যায় মানুষ সইছে কেমন করে এসব ভাবতে ভাবতে তার চেতনা স্তরের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যখন হঠাৎ এক মুহূর্তে সে বলে উঠল ধ্যাৎ শালা এরা মানুষ না আজকে আমি এদের লজ্জা সমূহ দেখিয়ে উলঙ্গ হয়ে থাকবো স্ক্যাডেনেভিয়ার কোন এক দেশের মানুষ উলঙ্গ হয়ে চলে সমসাময়িক পৃথিবীর যা অবস্থা তাতে আমার জানতে ইচ্ছা করে তাদের দর্শন কি?
পাঠক পাগলের পূর্বে উল্লেখিত সংজ্ঞার সূত্র ধরে আপনাকে আমি একটি ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাই তার আগে আবারো পাগলের সংজ্ঞাটি পূর্ণ স্মরণ করি সংজ্ঞা তত্ত্বের বিচারে সে হয় নগন্য
তাহলে আসুন আমরা পাগলের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করে দেখি আমাদের মধ্যে কে পাগল আর কে পাগল নয়ঃ
অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ের পরেও টিকে থাকা অন্তত একজন বিবেক তাড়িত ব্যক্তি যদি তার অফিসে ফুৎকার দিয়ে বলে বসেআমি ঘুস খাবনা এবং এই অফিসের একজন ব্যক্তিকেও ঘুস খেতে দেব নাতবে সে তার উল্টো আচরণের জন্য এবং সংখ্যা তত্ত্বের  বিচারের ভিত্তিতে লঘু হবার অজুহাতে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই শিক্ষিত রুচিবান ব্যক্তিটি ওই অফিসে সংখ্যা গুরু মানুষের মধ্যে পাগল বলে বিবেচিত হবে তার এহেন পাগলামির পরিণতি শেষে পাবনায় না হলেও হয়তো বান্দরবন, হাতিয়া কিংবা মহেশখালি বরন করে নিতে হবে অর্থাৎ পাগলদের মাঝখানে একজন পাগলের অবস্থান, বঞ্চিত নয়
কোন শিক্ষক যদি হঠাৎ বলে ওঠেন, আমরা ক্রমেই ভালো করে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ার প্রচন্ড প্রতিযোগিতা থেকে মুক্ত করে অভিভাবকদের উপর আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত করতে চাই কোচিং সেন্টার হবে পড়ার জায়গা আর স্কুল হবে শুধু সার্টিফিকেট প্রদানের প্রতিষ্ঠান অবস্থা চলতে পারে না, সমাজের সকল অঙ্গ পঁচে যাক কিন্তু শিক্ষক হিসাবে অন্তত আমরা নৈতিক অবসরণ হতে পারি না, কোন শিক্ষক যদি এমন ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক আন্দোলনের ঘোষণা দেন-পাঠক বলুন তো ওই শিক্ষক তখন শিক্ষক সমাজের আকুল সমর্থন পেয়ে শিক্ষক নেতায় পরিণত হবেন, নাকি মত ভ্রষ্ট শিক্ষক হিসাবে লাঞ্চিত বঞ্চনার নিষ্ঠুর করাঘাতে শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে রাস্তায় হাঁটবেন
একজন রাজনীতিক ব্যক্তিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেন যে-আজ থেকে আমরা একটি ছাত্রকেও আমার ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবো না কারণ দিনাজপুরের থেকে একজন দরিদ্র্য বাবা তার ছেলেকে ঢাকায় মিছিল করতে পাঠায়নি, পাঠিয়েছে ফুল টাইম পড়তে কিংবা তিনি যদি মনে করেন জাতি প্রায় দুই ভাগে বিভক্ত এক ভাগ বাংলাদেশী অন্যভাগ বাঙালি এই অবান্তর ঠুনকো বিভক্তির জন্য যুগ যুগ ধরে অনৈতিক উন্নয়নকে ঠেঁকিয়ে রাখা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয় কোন একটি দলের ওই রাজনৈতিক যদি মনে করেন ঠিক আছে বাংলাদেশের একজন বাঙালিও বাংলাদেশের বাইরে নয় আবার একজন বাংলাদেশীও বাঙালি না হতে পারার কোন কারণ নেই কাজেই এই অলিক দ্বন্দ্বের গ্যাঁড়াকলে নিহিত ষোল কোটি মানুষকে বন্দী না রেখে আমরা উভয়ের তাত্ত্বিক যুক্তি যার যার মতো আরও হাজার বার বলতে পারি তবে জাতীয় উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য আমরা এই দুটি বিষয় ছাড়া বাকি বিষয়গুলোতে একমত হতে পারি যেমন কয়লানীতি, কৃষিনীতি, যোগাযোগনীতি, শিক্ষানীতি, চাকুরী সংস্থাননীতি ইত্যাদি জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বে স্থানীয় ওই ব্যক্তিটি যদি এসব ভেবে নিজেকে প্রশ্ন রাখেন যে বাঙালি বাংলাদেশী দ্বন্দ্বের অজুহাতে উল্লেখিত এসব বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় এক সত্যের মধ্যে আনতে না পারার কোন কারণ থাকা উচিত নয় যদি তা করা না হয় তবে তা হবে আমাদের জন্য আত্মহত্যা বা রীতিমতো পাগলামি এবার তিনি যদি তার এই চিন্তাভাবনা তার দলে উপস্থাপন করেন তাহলে এর পূর্বে দেয়া পাগলের সংজ্ঞায় তিনি সংখ্যা লঘুর তত্ত্বে কোথায় নিক্ষিপ্ত হবেন অর্থাৎ উল্টো স্রোতে চিন্তার দায় হিসেবে পাগল উপাধি নিয়ে পাবনা না গেলেও ঘরের ভেতরে ঢুকে জড় বস্তু হতে বাধ্য হবেন
সময়ের কালে স্রোতের ধারায় প্রতিটি যুগই অন্ধকার যুগ আমরা শুধু শুধুই বলি অতীত ছিল আনন্দময় যুগ আর আমরা বলি আমরা বাস করি আলোর যুগে আলো অন্ধকার এটা যুগে যুগেই আপেক্ষমান শব্দ মূলত প্রতিটি যুগই অন্ধকার আলোর সংযোগ যুগ এমন নয় আমরা পূর্বে অন্ধকারে ছিলাম এখন আলোতে এখন থেকে তিন হাজার বছর আগে সক্রেটিস যখন তখনকার দাস এর প্রচলিত ব্যবস্থা তথা সমাজ রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গির দূর্বলতা নিয়ে নতুন কথা বলেছিলেন তখন কিন্তু তিনি তৎকালীন সমাজপতিদের রোষানলে পড়েছিলেন ওরা প্রকারান্তে তাকে কিন্তু পাগল বলেছিলো যেমন করে জার সরকার লেলিনের চিন্তাচেতনায় পাগলামি বলত এভাবে পৃথিবীর কালো স্রোতে প্রতিটি যুগই আপেক্ষিক অর্থে অন্ধকার আর আলোর সহবস্থান লক্ষণীয়
বাদ দেন পৃথিবী আপনার চারিদিক তাকান কোথায় আলো? বিদ্যা প্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে, কোট-কাচারি, ব্যবসা-বাণিজ্য কোথায় আলো? একটি সংবেদনশীল মানুষ হয়ে দেখুন তো আপনি কেমন আছেন আপনার আত্মসম্মানের ভবিষ্যত কেমন? চারিদিকে অন্ধকারের হাত ছানি
কে ঘুচাবে এই অন্ধকার কেউ উঁকি ঝুঁকি নিলে তাকে পাগল বলে বিতাড়িত করা হয় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না সংকোচন যুগের মতন নব্য অদৃশ্যের যুগ তুবও একজন পাগলের বড় প্রয়োজন যে পাগল বিপরীত কথা বলবে যার সাথে সামিল হবে পাগল ডাক্তার, বিতাড়িত রাজনীতিক আর শিক্ষক প্রতিষ্ঠিত হবে পাগলের যুগ প্রতিষ্ঠিত হবে আলো আসুন আবারো ভেবে দেখি কে পাগল আর কে পাগল নয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন