বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

সত্য-উপলব্ধি কি আমরা হারাতে বসেছি?


সত্য-উপলব্ধি কি আমরা হারাতে বসেছি?

সে নিজের ধর্ম, রাসূল আল্লাহকে চিনতে পারবে যে নিজের মা, মাতৃভাষা মাতৃভূমিকে ভালবাসতে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে

সংলাপ? একজন সাধকের এই আপ্তবাক্যের মর্মার্থ উপলব্ধির সময় এসেছে আজ ধর্মীয় অনুভূতির আবর্তে আমরা সবাই আবর্তিত আবেগ তাড়িত তথাকথিত ধর্মীয় বিশ্বাসে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না সত্যের দর্শন নিজের অন্যের কল্যাণিক চিন্তা-চেতনায় ধারণ করতে চাই সত্যকে কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? এই মাটিতে কোন্সত্যে প্রতিষ্ঠিত করবো নিজেকে?
মাশব্দটি স্বর ব্যঞ্জন বর্ণের এক অপূর্ব অনন্য সুষমা মন্ডিত সমন্বিত রূপ সঙ্গীতে স্বরগ্রামে মধ্যমের সংক্ষেপাক্ষরও বটে আভিধানিক অর্থের সীমানা ডিঙিয়েমাএক শাশ্বত চেতনার উৎস কেবল জন্মের কৃতজ্ঞতায় নয়, অস্তিত্বের প্রগাঢ় বন্ধনে মন্থনেমামানেই দুর্বার অঙ্গীকার শ্রদ্ধাবনত চিত্তে লালিত এক স্বপ্নগুচ্ছমাথেকেই অস্তিত্বের প্রকাশমায়েতেই অস্তিত্বের লালনমায়েই অস্তিত্বের বিকাশ
আক্ষরিক গঠনেমাযত ছোটই হোক না কেন, চেতনায় এর  বিস্তৃতি ব্যাপক, বিশাল তাইমাকেবল ঘরের চার দেয়ালে আদর্শ গৃহিনীর আঙ্গিক নিয়েই আবদ্ধ থাকেনি ছড়িয়ে পড়েছে কালিক বোধের উত্তরণে মর্মে মর্মে, জীবনে জীবনে একমাত্র ঠিকুজী রূপে সৃষ্টির মহত্তর আনন্দে অবর্ণনীয় কষ্ট সয়ে যেমাআমাদের এনে দেন পৃথিবীর আলোয় আগলে রাখেন স্নেহের সুশীতল আঁচলে দেহে দেন পুষ্টি আর মুখে দেন বুলি বুলি মানে কথা কথা মানে ভাষা ভাষা মায়ের ভাষা মাতৃভাষা মায়ের কোল থেকে আত্মনির্ভর হওয়ার আকাঙ্খায় পা রাখি যে ভূমিতে সেও আমার মায়ের ভূমি মাতৃভূমি সুতরাং সূত্রের অবিচ্ছিন্ন অনিবার্য সত্যে মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি এক চেতনায় গাঁথা অস্তিত্বের স্তর  বিন্যাসমাত্রা
জীবনের সফল উত্তরণেমাএক অবিকল্প সোপান-বেদী যে সন্তান তার জন্মদাত্রীমা’-এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল কর্তব্যপরায়ণ, তার সাফল্য অনিবার্য কিন্তু যে তার নিজ মায়ের প্রতি অনুরক্ত নয়, নিজের মাকে যে শ্রদ্ধা করতে বা ভালবাসতে জানেনি বা শেখেনি, সে কখনো আদর্শিক সন্তান হতে পারে না অনাদর্শিক জীবনের যাত্রায় সে তখন নিজ ভাষা, নিজ জন্মভূমির প্রতি উদাসীন বা বিরাগী হওয়া খুবই স্বাভাবিক
দেশ চায় আদর্শ নাগরিক কিন্তু কোথায় সে আদর্শ নাগরিক? কীভাবেই বা হওয়া যায় আদর্শ নাগরিক? একজন নাগরিক একজন সন্তানও দেশ মা’-তুল্য বা আখ্যায়িত বলা হয়, ‘জননী, জন্মভূমি স্বর্গদপী গরিয়সীমা, মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এই শ্রেষ্ঠত্বের আসনে যিনি আসীন, সেইমাকেমন আদর্শের প্রতীক এবং কতটুকু শ্রদ্ধাভাজন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নামা’-এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে এসেছে, ‘আমাকে একজন আদর্শ মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি সুন্দর জাতি দিবসুতরাং একটি সুন্দর দেশ একটি সুন্দর জাতি গড়বার ক্ষেত্রেমাকতটা গুরুত্ব বহন করে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায় সেইমা’-কে উপেক্ষা করে কোনভাবেই কি কেউ দেশ জাতির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে?
মায়ের কাছে শেখা বুলি তথা মাতৃভাষার প্রতি তখনই শ্রদ্ধা প্রীতি জন্মাবে এবং প্রগাঢ় হবে যখন মায়ের প্রতি গভীর সুদৃঢ় আনৱরিক বন্ধন থাকে কেননা মা-বোধ তখন আদর্শিক চেতনায় তাকে অনুপ্রাণিত করবেমাতথাআত্মবিকাশে ভাষাই সেই বিকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যম তাই মাতৃভাষার চর্চা শ্রীবৃদ্ধিতে তার জাগে আন্তরিকতা নতুবা ভিন্ন ভাষার প্রতি মোহ দিন দিন বাড়তেই থাকবে আন্তর্জাতিক বিলাসিতায় রুচির বিকৃত ধারায় সে ছুঁতে উদগ্রীব হবে ভিন্ন ভাষা ভিন্ন ভাষীকে গ্রাস হবে অন্যের ছিন্ন হবে আপন বলয় থেকে উপড়ে যাবে মূল শিকড় টবে রাখা গাছের মত সে তখন প্রোথিত হবে ভিন্ন ভূমিতে অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্যের সীমারেখায় হবে বন্দি শোষিত নিজস্ব ভুবনের অনন্ত আলো-বাতাস এবং মুক্ত দিগন্ত যাবে হারিয়ে ভয়ংকর সেই পতনের কথা আমরা কি স্মরণে রাখি?
ভিন্ন ভাষা প্রীতি, ভিন্ন সংস্কৃতির চর্চা করে যারা নিজেদের আন্তর্জাতিক করতে চায় তারা কি প্রথমেই তার মা-মাতৃভূমি, মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ত দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত? ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন সংস্কৃতির আবর্তে নিজেকে চালিত করে কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না জীবনের ভিত্তি পতিত ব্যক্তির সমষ্টিতে জাতির জীবনেও নেমে আসে বিপর্যয় এই সত্য - উপলব্ধি কি আমরা হারাতে বসেছি?
নববর্ষের শুভাগমনে আমরা বাঙালি জাগ্রত হই নিজস্ব সত্তা আর চিন্তা চেতনায় এই চাওয়া সার্থক হবে যখন আমরা ভালোবাসতে শিখব আপনমা’-কে, ভালোবাসতে পারব মাতৃভাষা বাংলা-কে, ভালোবাসতে জানব মাতৃভূমি বাংলাদেশ-কে
ভালোবাসার এই ক্রমধারা অটুট অকৃত্রিম রেখে আবার আমরা হই জাগ্রত চিত্ত বাঙালি - দেশ জাতিকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করি আদর্শ হিসাবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন