বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০১৫

রাজনীতি নয় জননীতি হাতছানি দিচ্ছে


রাজনীতি নয়জননীতি হাতছানি দিচ্ছে

সংলাপ ॥ বাংলাদেশ-পাক-ভারত উপমহাদেশের মধ্যে পাকিস্তানের প্রভু যুক্তরাষ্ট্রেরবৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্যসমূহে আজও কোন পরিবর্তন হয়নি। চীনের সমপ্রসারণ ঠেকাতে তার দরকার ভারতের; বাংলাদেশকে দরকার বার্মা (মায়ানমার)কে  শায়েস্তা করে রাখার জন্য। আবার উঠতি পরাশক্তি হিসেবে ভারতকে চোখে চোখে রাখতে হবে। ভারত বেশি বেয়াড়াপনা দেখালে তাকে উপযুক্ত শিক্ষাও দিতে হবে। উপমহাদেশের সব রাষ্ট্রের সরকারগুলোকে রাতারাতি ঘোলাপানি খাওয়াতে হলে ধর্মকে তাসের তুরুপ হিসেবে সব সময় ব্যবহার করতে হচ্ছে। জন্মগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ধর্মের আফিম খাইয়ে ভারতের অবস্থা টালমাতাল করে দেয়া সহজেই সম্ভব হবে - এ চিন্তা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজ থেকে আগবাড়িয়ে বাংলাদেশকে চারদলীয় জোটের আমলে ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ হিসেবে একটি সত্যায়নপত্র দিয়ে রেখেছে যাতে ওরই ছত্রছায়ায় যে কোন সময় ধর্মীয় সন্ত্রাস ও উগ্রবাদীদের ব্যবহার করা যায়।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনের রায়ে এদেশ সংক্রান্ত আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতিও বদলাবে বলে আশা করা যায় না। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, তথাকথিত মানবতাবাদী বারাক ওবামার সরকার ভারত উপমহাদেশে আমেরিকান নীতি না পাল্টালে, বাংলাদেশকে সব সময় আমেরিকার আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের কোন কোন অঙ্গনের ব্যর্থতায় আবারও ধর্মীয় উগ্রবাদ চাড়া দিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। সামপ্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে ইতোমধ্যেই কাজশুরু হয়েছে; জনগণকে স্মরণ রাখতে হবে এর পেছনেও আমেরিকা ও সৌদি আরবের হাত আছে। আমাদের জনগণ স্পষ্ট রায় দিয়েছে বাংলাদেশে ধর্মের নামে রাজনীতি চলবে না। অতএব ১৯৭২ সনের সংবিধানে ফিরে যাওয়া শেখ হাসিনার মহাজোটের জন্য জনতার ম্যানডেট। কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে পারল না এবং করবেও না এটা চিন্তাবিদদের অভিমত। কারণ বহিঃবিশ্বের চাপ ও ক্ষমতার লোভ।
১৯৭২ সনের সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।
ইতিহাস বলে বাংলার মাটিতে সবচেয়ে বেশিনরবলীর নায়ক অখ্যাত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সামরিক শক্তির জোরে এবং দিল্লীর চাপে ওই নীতিগুলো যথেচ্ছা বদলিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রচলন করে। এতদিন পর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে জনগণ ওই ভুয়া জাতীয়তাবাদকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। মোদ্দাকথায়, জনতার রায়ের সারাংশহল ১৯৭২ সনের সংবিধান পুনরুদ্ধার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনা। বিজ্ঞদের মতে এটা বলা সহজ কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ছিল বাঙালির প্রথম জয়।
এখন হাসিনা সরকারের যুক্তিসঙ্গতভাবে নৈতিক ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অনুসারে অতি দ্রুত প্রথম বিজয়ের উপর জমে থাকা ময়লা আবর্জনা সাফ করা এবং জনগণের দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পরবর্তী  জয়ের জন্য সার্বিক অঙ্গনে কার্যক্রম হাতে নেয়া। দলের মধ্যে দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাচারী ও চাটুকারী রাজনীতিকদের বহিঃস্কার করে অথবা সংশোধনের ধারায় পরিবর্তনের সুযোগ দিয়ে ধীরে ধীরে সংস্কারের মাধ্যমে আবর্জনা পরিষ্কার করে জননীতি প্রণয়ন করা। জনগণ যে লক্ষ্যসমূহ ঠিক করে দিয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য, প্রগতি ও আধুনিকতায় উত্তরণে রাজনীতির বদলে জননীতি প্রনয়ন করা এবং সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন করা। রাষ্ট্র জনতার রায়কে শিরোধার্য করে নিলে মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকীকরণ, ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির ঘাঁটিগুলি ধ্বংস এবং প্রশাসনে আমলাতন্ত্রের পাশাপাশি অভিজ্ঞ, পারদর্শী এবং দূরদর্শিদের নিয়ে প্রত্যেক মন্ত্রনালয়ে একটা করে পরামর্শ সেল গঠন সময়ের দাবী যাতে বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারা যায়।
আর তাহলেই স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত শক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগিয়ে নেবে বাঙালির সহজ সরলচৈতন্যের আনন্দময় জীবনের স্বপ্নকে। বাঙালি চাই চাই করে রব তুলতে চায় না বরং সত্যের প্রতিধ্বনিতে সোচ্চার হয়ে উঠতে চায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন