বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫

আন্দোলনের পথ ধরে সরকারকে হাটতে হবে

আন্দোলনের পথ ধরে
সরকারকে হাটতে হবে

সংলাপ ॥ মুসলিম লীগ নামক দলটির নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু এর মাত্র ৭ বছর পর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের সাথে মুসলিম লীগের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছিল মুসলিম লীগের। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।
এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে শুরু করে অসংখ্য গণআন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- সেকথাটি অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশে স্বাধীন ও মুক্ত চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফার একটি বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যার মূল কথা হচ্ছে এই যে, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় যায় তখন সমাজের নগণ্য সংখ্যক লোক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়, আর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতাচ্যুত হয় তখন দুর্যোগ নেমে আসে সাধারণ মানুষের জীবনে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানীরা সব নিয়ে গেছে, রেখে গেছে চোরগুলোকে’। ‘যে দিকে তাকাই, দেখি শুধু চোর’। ‘আমি ভিক্ষা করে নিয়ে আসি, আর চাটার দলেরা সব খেয়ে ফেলে’।
এই চোর আর চাটার দলের কারণেই  আজকে দেশের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ওই চোর আর চাটার দলেরা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে তৈরি করেছে ভয়াবহ রকমের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। তারা ধর্মান্ধদের সাথেহাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবস্থান তৈরি করে বর্তমানে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকেও বেকায়দার মধ্যে ফেলার চেষ্টায় রত। যা থেকে উত্তরণঘটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের অপপ্রচারে নিরুৎসাহিত না হয়ে এবং ভেদাভেদ ও অন্তঃকলহ ভুলে জনগণের আস্থা অর্জনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সরকারের নীতি-নির্ধারকরাও এখন জনগণের চিন্তার কথা বুঝতে পারছেন কিনা তা সময়বলে দেবে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থাকলেও এই মহাজোট সরকারের  প্রতি সাধারণ মানুষের চিন্তার অবস্থানটা বের করার চেষ্টা চলছেও বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এত জনপ্রিয় হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে সরকারের অবস্থাটি আজ কেমন তা খতিয়ে দেখে উত্তরণের পথ খোঁজার কাজটি করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতা ও আন্তরিকতার সাথে। বঙ্গবন্ধু এক বিদেশী সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘আমার যোগ্যতা হচ্ছে এই যে, আমি এদেশের মানুষকে ভালোবাসি।’ এ কথা ভুলে যাওয়া সমীচীন নয় যে, বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুররা ৭৫-এর ১৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অতি কাছেই অবস্থান করতো। বর্তমানেও আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ করার জন্য এই ধরনের ষড়যন্ত্রকারীর অভাব নেই এবং তারা বেশ সফলভাবেই সক্রিয় রয়েছে। দলটি বর্তমানে যেভাবে চলছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখনই। জাতির বিবেকবান ও সচেতন মহল চাইছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে এর নীতি-নির্ধারকদেরকে এখন জরুরি ভিত্তিতে নিম্নলিখিত কর্মপন্থাগুলো বাস্তবায়ন করা দরকারঃ
বর্তমানে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে যে নব্য রাজাকাররা জায়গা করে নিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে সরকার ও দল থেকে বের করে দিতে হবে।
সরকার ও দলে সততা ও দক্ষতার মূল্যায়ন করে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের স্থান করে দিতে হবে যাতে তারা দেশ ও সমাজের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মপন্থা তৈরি করতে পারেন।
দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সত্যের আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে।

স্মরণ রাখা দরকার যে, ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়লাভের পেছনে একটি বড় ধরনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। তখন ষড়যন্ত্রকারীরা গুজব ছড়িয়েছিল এইভাবে যে, জাহানারা ইমাম আন্দোলনে সফল হলে এদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব চলে যাবে, ঠিক তেমনি এখনকার নব্য রাজাকাররা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে যে, জোট সফল হলে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বও চলে যাবে।  যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য হেফাজত ইসলামের মত বিভিন্ন ইসলামী নামে যে সংগঠনগুলো বাংলার বুকে গজিয়ে উঠছে সেটি নতুন কিছু নয়, জামাতেরই সহোদর সংগঠন মাত্র। বহুদিন আগে থেকেই এইসব নামের সংগঠনগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা-মসজিদ ভিত্তিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। বর্তমানে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আগের চাইতে আরও অনেক বেশি অর্থ-সম্পদে পুষ্ট হয়ে ধর্মের নামে মাঠে নেমেছে। এদেশের ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু থেকে তাদের দৃষ্টি সরানোর জন্যই তারা এখন ব্লগার-নাস্তিক প্রসঙ্গ তুলেছে। একাত্তরের রাজাকারসহ পাকিস্তানী বাহিনীর সকল দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যে ‘দুস্কৃতিকারী, ‘দুর্বৃত্ত’, ‘ভারতের অনুচর’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলতো সে কথাটিও আজ স্মরণ রাখা দরকার। একটা কথা আজ স্বতঃসিদ্ধই যে, আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু। আর সে আওয়ামী লীগে আজ নব্য রাজাকাররা যেভাবে ঘাপটি মেরে বসেছে তা থেকে দলটিকে সাফ করতে না পারলে দেশে আবারও বিপর্যয় নেমে আসবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর পরে হলেও মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি তাকিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি এদেশের জনগণের নাড়ীর টান। এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণেই তারা আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন