বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০১৪

'এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে যেদিন হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খ্রিস্টান জাতি-গোত্র নাহি রবে'

'এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে
যেদিন হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খ্রিস্টান জাতি-গোত্র নাহি রবে'

সংলাপ ॥ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ভিন্নতা আছে কিন্তু ধর্মের মূলে কোন ভিন্নতা নেই। নানা পদ্ধতির মাধ্যমে একই চিন্তার বিকাশ সাধিত হয়েছে এবং একই সত্যকে প্রকাশিত করার প্রয়াস রয়েছে। বিশ্বের সকল মানুষ একই উপাদানে তৈরি। বংশ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য হয় না। দ্বীনের নবী (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন - 'আদম সন্তানেরা সবাই সমান। স্রষ্টাপ্রেম ব্যতীত তাদের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই।' কোন মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে না। মানুষে মানুষে পার্থক্য অর্জিত গুণের ভিত্তিতে হয়। রক্তে, বর্ণে, গোত্রে, গোষ্ঠীতে, ভাষায়, রাষ্ট্রে, মানুষের মধ্যে পার্থক্য নেই। মানুষে মানুষে বিভক্তি শয়তানের কাজ। বিভক্ত না করে শয়তান তার শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষের রব। তিনি কেবল মুসলমানদের রব নন। কেউ দাবি করতে পারে না যে তিনি শুধুই আমার। তিনি সকলের। সমগ্র সৃষ্টি জগতের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্ব স্ব পরিবেশে বড়-ছোট, গরীব-ধনী, শিক্ষিত-মূর্খ-জ্ঞানী সবারই কাম্য 'শান্তি'। তাই যুগে যুগে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আবির্ভূত হয়েছেন স্ব স্ব জাতির মধ্যে পথ প্রদর্শক। বাংলার বুকে অন্য জাতি, অন্য ভাষা ও অপসংস্কৃতি যখন বারবার হানা দিচ্ছিল সেই সময় লালন সাঁঈজীর আবির্ভাব ঘটে। সাঁঈজীর দর্শনে রয়েছে - সবার উপরে মানুষ সত্য, মানুষ মানুষের জন্য। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর অমূল্য বাণী - 'এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে যেদিন হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খ্রিস্টান জাতি-গোত্র নাহি রবে।' বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়ে বাঙালি জাতিকে দিয়ে আসছে দিক নির্দেশনা। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে সাঁঈজীর দর্শন বাংলার মানুষকে দেখালো নতুন দিগন্ত, নতুন প্রাণ যার ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান।

লালন সাঁঈজী একজন বাঙালি। এই বাংলায় বাঙালিদের মধ্যে বাংলা ভাষায় শান্তি-ধর্ম প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। শান্তি-ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি যে দর্শন দিয়েছেন তা বাঙালি জাতিকে একটি উন্নত জীবনধারার সন্ধান দিয়েছে। সহজ সরল সাধারণের ভাষায়, কবিতার ছন্দে, গানের মরমী সুরে তিনি যে 'লালন সংস্কৃতি' সৃষ্টি করে গেছেন, তা বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সাথে অবিচ্ছেদ্য। পৃথিবীর বুকে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, ততদিন লালনও থাকবেন স্মরণীয় এবং বরণীয়। পূজিত হবেন একজন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার উর্ধ্বে 'শান্তি-ধর্ম' প্রচারক হিসেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন