বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭

দিন বদলে শ্রমিক আন্দোলন

দিন বদলে শ্রমিক আন্দোলন

সংলাপ ॥ সঙ্কটের আবর্তে নিমজ্জমান বিশ্ব আধিপত্যবাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া প্রয়াসে ক্রমাগত প্রান্তসীমার দিকে অপসারিত শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের জ্বলন্ত বাস্তবতার মধ্যে উদ্যাপিত হলো এবারের মে দিবস। পুঁজিবাদ তার সর্বগ্রাসী থাবা নিয়ে গোটা বিশ্বকে যত শুষে খেতে চাইছে ততোই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে প্রচলিত অসাম্যের ও বিভেদের সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে সামাজিক অসন্তোষ বাড়ছে। উদ্ভব হচ্ছে বিস্ফোরক পরিস্থিতি। প্রতিনিয়ত বিশ্বের কোনা না কোনো দেশে ঘটছে তার তেজোদীপ্ত বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক পুঁজিবাদীদের উচ্চমার্গীয় কলাকৌশল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকশ্রেণীর সংগঠিত হবার ক্ষেত্রে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শ্রম দিতে দিতে নিঃস্বপ্রায় শ্রমিকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিবাদী মানসিকতাকে ওই বাধা-প্রতিবন্ধকতা আটকে রাখতে পারছে না। তাই যেখানে যেমন বাস্তব অবস্থা সেখানে তেমনভাবেই শ্রমিকশ্রেণীর ক্ষোভের, প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আর সেই স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আন্দোলনের গর্ভ থেকে জেগে উঠছে নতুন চেতনা যা তাদের সংগঠিত হবার এবং ঐক্যবদ্ধ হবার প্রেরণা জোগাচ্ছে। এটাই শ্রমিকশ্রেণীর বৈশিষ্ট্য। তারা সৃষ্টি করে, উৎপাদন করে, শ্রমদান করে কিন্তু তাদের তৈরি সম্পদে তাদের অধিকার থাকে না। এই ব্যবস্থাকে বদলিয়ে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখা শ্রমিকশ্রেণীর সহজাত।
শ্রমিকশ্রেণীর এই সহজাত প্রত্যাশারই বাস্তব রূপ সাংস্কৃতিক বিপ্লব দিন বদলের পালায়। শ্রমিকশ্রেণীর স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো সামাজিক ন্যায়, সম্পদের সুষম বণ্টন। শ্রমের উপযুক্ত মূল্যদান ও মর্যাদা, সংখ্যাগরিষ্ঠের শ্রম শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘুর মুনাফা সৃষ্টির ব্যবস্থাকে বদলানো। এই প্রবণতাই শ্রমিকশ্রেণীর ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলে। শ্রমিকশ্রেণীর আশু দাবির মধ্যে সাধারণভাবে ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকলেও এই আন্দোলনের বিকাশের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক চেতনার বীজ অঙ্কুরিত হয়। তারা রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চিনতে শুরু করেন। আধিপাত্যবাদীরা এটা জানে, তাই তারা পদে পদে শ্রমিকদের সংগঠিত হবার আন্দোলন করার চেষ্টাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। মালিকশ্রেণীর এইসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন থেকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হবার বার্তা দেয় মে দিবস। বিশ্বে শোষিত মানুষের সৌভাতৃত্ববোধ এবং সংহতির চেতনাই পারে শ্রমিকশ্রেণীর প্রত্যাশা পূরণের পথ সুগম করতে। শ্রমিকশ্রেণীর জীবনসংগ্রামে মে দিবস প্রতিবছরই জোট বাঁধার নতুন প্রেরণা জুগিয়ে যায়। আজ দেশজুড়ে উদারনীতির নামে পুঁজিবাদ মেহনতী মানুষের প্রান্তিকীকরণ দ্রুততর করছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ,নৈরাজ্যবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা ও হিংস্রতার শক্তি খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। সমাজ বদলের দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আশু সংগ্রামও জরুরি হয়ে পড়েছে। এবারের মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলনকে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সংহত করার পথ কি প্রশস্ত করতে পারবে? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন