বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

সময়ের সাফ কথা.... বাংলার রাজনীতির মাটি

সময়ের সাফকথা....
বাংলার রাজনীতির মাটি

সংলাপ ॥ বাংলার মসনদ দখলের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা অন্যায়, তার মধ্যে পরিণত বুদ্ধির অভাবই প্রকট হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন কেলেঙ্কারি নিয়ে চেপে ধরে আওয়ামি দলের কয়েকজন প্রথম সারির নেতাকে ব্ল্যাকমেল করে কিন্তু দেশবাসীর মন জয় করা যাবে না। শেখ হাসিনার ভাবমূর্তিতে অন্যায়ভাবে কালি দিতে গেলে ফল হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই প্রবল। সবার আগে দরকার রাজনৈতিক অঙ্গনে হাসিনার অনুকরণযোগ্য ভাবমূর্তি নির্মাণ। যখন তখন যত্র তত্র হাসিনার নামে কুরুচিকর মন্তব্য করে গণমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার যে চেষ্টা ইদানীং কেউ কেউ করছেন, তা সুস্থ মনের সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেন না। দেশে বহু কষ্টে যতটুকু শান্তি ফিরেছে, সরকারকে বিপাকে ফেলার বাসনায় সেসব বানচাল করার সামান্য অপচেষ্টা হলেও সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না।
জনকল্যাণের রাজনীতির অনেক পরিসরই এখানে বর্তমান আছে রাজনীতিকদের জন্য। সেই শূন্যস্থান দখলের একমাত্র উপায় হলো ইতিবাচক রাজনীতি। হাসিনার রাজনীতি এবং তাঁর যাবতীয় প্রচারের লক্ষ্য হল শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়ন। অতএব হাসিনার সঙ্গে টক্কর দিতে হলে অন্যান্যদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, বাংলার আরও উন্নয়ন ও সত্য প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য হওয়া। সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে ঢাকা সহ সমগ্র বাংলার উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়া।
সরকারের প্রধান হিসাবে হাসিনা যা যা করছেন এবং করতে চান তার প্রত্যেকটিতে রাজনীতিকদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হোক। একান্তভাবেই প্রকল্পগুলো রূপায়িত হোক দ্রুততার সাথে। যেমন পদ্মাসেতু, রেল, মেট্রোরেল ও সড়ক সম্প্রসারণ, রেল পরিবহণের আধুনিকীকরণ, বন্দরের ক্ষমতা বৃদ্ধি, নদীগুলোর দূষণমুক্তি, নদীভাঙন রোধ প্রভৃতি। শিল্প সংস্থাগুলোকে বাঁচানো, নতুন শিল্পের বিকাশ, পর্যটন প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলোকেও অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা কর্তব্য। স্বাস্থ্য পরিষেবার দৈন্যদশা কাটাতেও সকল রাজনীতিকদের  অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
দেশবাসীর বাস্তব সমস্যাগুলো চাপা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার বা রাখার বদ কৌশল কোনও ভাবেই যেন রাজনীতিকদের মনে স্থান না পায়। প্রশাসনে দুর্নীতি আর রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন নির্মূল করার যে প্রতিজ্ঞা, তা থেকে যেন হাসিনা সরকার কোনও ভাবেই বিচ্যুত না হয়। তার মুখে যথার্থভাবেই মান্যতা পেয়েছে গরিবের শক্তি এবং মধ্যবিত্তের মেধার প্রশ্নটি। তা আন্তরিক হলে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচিটি। তিনি নিজেই মনে করেন, গরিবকে শিক্ষিত করা গেলে, তাদের ঠিকমতো দেখভাল করা গেলে তারা সমাজকে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি দিতে পারবে। অতএব জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গরিবদের জন্য বইপত্র, পোশাক-আশাক এবং বৃত্তির ক্ষেত্রটি আরও বড় করতে হবে। সহজ কথায়, ক্রমশ বাড়াতে হবে শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ ও নজরদারি। জোচ্চুরি অবশ্যই ঠেকাতে হবে; কিন্তু তা গরিবের খিদের অন্ন কেড়ে নেয়ার বিনিময়ে নয়।

অতএব, হাসিনার নেতৃত্বকে পরিকল্পনামাফিক এগুতে হবে জাতীয় অভাবগুলো দূর করার লক্ষ্যে। প্রয়োজন এই ব্যাপারে নতুন এক গণ আন্দোলন গড়ে তোলা। তাতে আপাতভাবে কতটা সরকারের লাভ কিংবা রাজনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, সেই হিসাব বড় করে দেখাটা ভুল হবে। গুরুত্ব পাক, শুধু সাধারণ মানুষের লাভালাভের প্রশ্নটি; মানুষের দুর্দশা দূর করতে কোন দলের আগ্রহ আন্তরিকতা কতটা। মানুষের পাশে থাকার প্রতিযোগিতায় জিতে আসার আগে পর্যন্ত বাংলার মাটি কিন্তু বিরোধী রাজনীতিকদের জন্য অনুর্বরই রয়ে যাবে। বাংলার রাজনীতির মাটি সবার থেকে আলাদা। এখানে অনিচ্ছাকৃত ভুলেরও কিন্তু মাফ হয় না সব সময়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন