বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

সময়ের সাফ কথা.... সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারাটা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা

সময়ের সাফ কথা....

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারাটা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা

সংলাপ ॥ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন ‘দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারাটা রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনা। গত শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার দেশে পাঁচ বছর শাসন করতে পারবে অথচ স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে কোনো নির্বাচন দিতে পারবে না, এটা রাজনীতিবিদদের জন্য দেউলিয়াপনা।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলে বিচার বিভাগের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনকে একটি মহলের খেয়াল খুশি মতো পরিচালনার ব্যবস্থা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন রাষ্ট্রের মূলভিত্তি জনগণের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পরিচয় খর্ব করায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে ঘোষণা করে।
সামরিক ফরমানের মাধ্যমে আনা সংবিধানের সংশোধনীসমূহ বাতিল প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। বিচার বিভাগের ভূমিকার কারণে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতার পালাবদলের পথ রুদ্ধ হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৬-এর দ্বিতীয় দিনে কর্ম-অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, বিচারব্যবস্থায় মামলাজট ও বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা জনগণের বিচার লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই মামলাজটের দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হবে।’ বিচারকাজে অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি পরিহার করতে তিনি বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের নিম্ন আদালতে প্রায় ২৭ লাখ মামলার জট আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। অনিষ্পন্ন মামলার এই বোঝা আদালত ব্যবস্থাপনাকে গতিহীন করতে পারে। মামলার ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে। এ কারণে মানুষ তার বিরোধকে আদালতে আনতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আগ্রহী হতে পারে বিচারবহির্ভূত পন্থায় অর্থ বা পেশিশক্তির মাধ্যমে সুবিধাজনক সমাধান প্রাপ্তিতে। ফলে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা শিথিল হতে পারে। সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতের প্রসার ঘটতে পারে।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা উপস্থিত বিচারকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘মানসম্মত সুবিচার প্রাপ্তির ক্রমবর্ধমান জন-আকাঙ্খার বিপরীতে অবকাঠামোগত ঘাটতিসহ বহুবিধ সীমাবদ্ধতার মাঝে আপনাদের কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে বিনা বিলম্বে, স্বল্পব্যয়ে ও প্রকাশ্যে বিচারের মাধ্যমে আইনসম্মত সুবিচার প্রাপ্তি প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা নাগরিকদের মানসম্মত সুবিচার নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতাই অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন