সময়ের সাফ কথা....
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা
নজরুল
ইশতিয়াক ॥ বৃষ্টি কি প্রাণী কুলের জন্য আর্শীবাদ! শুষ্ক জমিনে একফোটা বৃষ্টি প্রাণ
ফেরায়। পরিত্যক্ত জমিনে বৃষ্টি আনে নব জীবনের উত্থান। জীর্ণতা উবে যায়, প্রাণে ফিরে
আসে প্রাণ। বৃষ্টি বাঁচিয়ে রেখেছে সবুজ এ বিশ্বকে। আর প্রাণী জগতের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার
মানুষ তার দেহে-অন্তরে-অন্তরীক্ষে বৃষ্টির মাতম অনুভব করে। দেহের নদীতে জোয়ার আসে,
বৃষ্টি নামে, সেই বৃষ্টির কারণ রূপ সন্ধান মানুষের দেহ পৃথিবীকে ছান্দসিক আনন্দে নিয়ে
যায়। দেখতে না পারলে আনন্দ কোথায়! অনুভব করতে না পারলে জাগরণ কোথায়! বৃষ্টিকে ধরতে
না পারলে প্রাণের গভীরের প্রাণ কোথায়! প্রেম বৃষ্টি বর্ষণের অপেক্ষা তো সারাজীবনের
সাধনাযজ্ঞ। ‘কবে হবে সজল বরষায়/আমি বসে আছি সেই ভাবনায়/ চাতক বাঁচে কেমনে মেঘের বরষন
বিনে/ বিনে নব ঘন বারি/ খায় না চাতক অন্য বারি’।
বৃষ্টির
জন্য আজীবন প্রার্থনা এই সবুজ বন-বনানী, পাখ-পাখালী, এই বিশ্বচরাচরের প্রতিটি প্রাণীর।
গানে
উপমায় প্রেক্ষিত প্রেক্ষাপণে বৃষ্টির উপস্থিতি প্রধান হয়ে আসে বারবার। জানা দরকার বৃষ্টি
ভাল লাগে কেন? বৃষ্টির ছন্দ আছে বলে। শীতল করে, সতেজ করে, শিহরণ তোলে, তনু মনে আনন্দ-বিরহ
আনে কিছুক্ষণের জন্য। বৃষ্টির সৃষ্টি, সৃষ্টির আনন্দে ছন্দ ভাবাবেগ বয়ে নিয়ে আসে। বৃষ্টির
কি বাড়াবাড়ি আছে? থাকলেও তাতে কি বিরক্তি অনাসৃষ্টি করে?
উর্দ্ধশ্বাসে
ছুটে চলা মানুষেরা বৃষ্টিতে ভিজতে চায় না। বৃষ্টি ভাললাগে না বলে ভিজতে চায় না এমন
মানুষের সংখ্যা কম। রোগ বালাই অসুখের ভয়ে ভিজতে পারেন না বলে কিছু মানুষের আফসোস রয়েছে
বটে। শৈশবের বৃষ্টি, প্রেমিক হৃদয়ের বৃষ্টি, দম্পতি জীবনের বৃষ্টি, নরম স্বভাবের বৃষ্টি,
কাব্য হৃদয়ে বৃষ্টির আবেদন কখনো ফিকে হয়ে যায় না।
আরেক
কিসিমের মানুষের কাছে বৃষ্টির ছন্দ বড্ড বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। যারা ছন্দ উপলব্ধি
করেন না, শুনতে পান না, সংযোগ ঘটে না, ভাসতে পারেন না, সাঁতার কাটতে জানেন না, শরীয়তের
বেদাত ফতোয়ার আওয়াজ নিয়ে ঘুমাতে যান। সীল মোহর মারা হৃদয়ে বৃষ্টি কষ্ট হিসেবে আবির্ভূত
হতেই পারে। বৃষ্টি কি কোন শাস্ত্র কিতাবের ধার ধারে? যত প্রার্থনা করা হোক না কেন,
বৃষ্টির ছন্দ বন্ধ হলে, বৃষ্টি কয়েক বছর একটানা না হলে বিরান মরুভূমিতে পরিণত হবে যে
কোন ভূমি। বৃক্ষ বাঁচবে না, ফসল ফলবে না, মারা যাবে জলজ প্রাণী ও জীব সম্প্রদায়। মরুভূমির
মত রুক্ষ হয়ে উঠবে চারপাশ। শাস্ত্রকারদের সব লম্প-ঝম্প থেমে যাবে। কঠিন কঠোর জটিল মনস্তত্বের
কাছে বৃষ্টি বাড়তি কোন আবেদন সৃষ্টি করে না। অনুরাগী সাধক, সৃষ্টিশীল-গতিশীল মানুষের
কাছে বৃষ্টি স্রষ্টার আশীর্বাদ। বৃষ্টি অনুরাগী মানুষ বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনেন।
শহরে
বৃষ্টি তেমন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। উন্মাদনা বাড়ায় বৈকি তাও সাময়িক বিড়ম্বনার সুখানুভূতি।
হাল আমলে বৃষ্টির আগমন নিয়ে নিরাসক্ত বক্তব্যবাজী ও সঙ্গীত আয়োজন চোখে পড়ে। তাও বৃষ্টি
আসার আগে বৃষ্টি আসলে সব আয়োজন চুকে যায়। মোবাইলে বৃষ্টি ভেজা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড
করার জন্যও উঠতি তরুণদের সৌখিন বৃষ্টিতে ভেজা। এফ.এম.রেডিওতে বৃষ্টি আড্ডায় বৃষ্টি
নিয়ে যেসব আলাপচারিতা হয় তা শোনার আগ্রহ বৃষ্টিপ্রেমিদের থাকার কথা নয়। নাগরিক যান্ত্রিক
জীবন বছরে দু-এক পশলা বৃষ্টির প্রার্থনা করে। বেশিক্ষণের বৃষ্টি ভয়াবহ যানজট-পানিজট
সৃষ্টি করে। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষের কাছে দু’একদিনের টানা বৃষ্টি অনাহত
বিড়ম্বনা বাড়ায়।
রাজধানীর
আশপাশের খাল-নদী-সোয়ারেজ দখল হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে। যারা নামে বেনামে এসব
দখল করেছে তাদেরই প্রতিনিধিরা দখল জলাবদ্ধতা নিয়ে সভা সমিতি সেমিনার করে।
ভূমি
দখলের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজধানীর সব খাল-নদী বহু পূর্বেই দখল হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতা
আর কোনভাবেই সমাধান করা যাচ্ছে না। অদ্ভুত সত্য হলো যেসব গণমাধ্যমের মালিকরা ভূমি ও
নদী দখল দস্যু হিসাবে পরিচিত তাদের মালিকানাধীন টিভি -পত্রিকা জলাবদ্ধতা নিয়ে লিড ষ্টোরী
করে। বৃষ্টির ভিডিও চিত্রের জন্য নাটক সিনেমা মিউজিক ভিডিও’র জন্য কারো কারো অপেক্ষা
থাকে। কৃত্রিম বৃষ্টির অর্গানাইজ শর্ট রিয়েলিটি তৈরী করে না।
আবার
বৃষ্টির পরের সূর্যালোতে ভিন্ন ইমেজ তৈরী হয়। তবু শহরে নাগরিক মন ব্যালকুনিতে হেলান
দিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে। যা পায় তাতেও যদি নষ্টালজিক প্রাপ্তি ঘটে। শিশুদের
কাছে বৃষ্টি এক ভিন্ন আনন্দ নিয়ে আসে। বৃষ্টির পানি ছুয়ে দেখার জন্য চঞ্চল শিশু ব্যাকুল
হয়ে উঠে। শহরে গ্রামে সবখানেই শিশু বৃষ্টির গানে নেচে উঠে। শিশুর সাথে বৃষ্টির পরিচয়
কতই না অপূর্ব সংযোগ। প্রতিটি পিতা-মাতা শিক্ষকের উচিত বৃষ্টির সাথে শিশুদের পরিচয়
করিয়ে দেয়া। বর্ষায় গ্রামের বাড়িতে শিশুদের নিয়ে যাওয়াকে বড্ড বাড়াবাড়ি মনে হলেও নিশ্চিত
এটি হবে শহুরে নাগরিক শিশুদের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ।
বৃষ্টি
আসে গ্রামে, অজপাড়া গায়ে, সবুজের সমারোহে-বিস্তীর্ন মাঠে। টানা দু-একদিনের বৃষ্টি,
পাহাড়ী ঢল হয়ে নেমে আসা বৃষ্টির প্লাবনে শস্য ক্ষেত ডুবে যায়, এক পুকুরের পানি অন্য
পুকুরে গিয়ে মেশে, পাহাড় ধ্বসে-বন্যার পানিতে ডুবে-ঘরবাড়ি চাপা পড়ে কিছু প্রাণহানী
ঘটে। বৃষ্টি জনিত ক্ষতির পরিমান নিয়ে অংক কষেন দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদরা। তবু একটি
সহজ প্রশ্ন করা যেতেই পারে, বৃষ্টির কারণে যে পলির আস্তরণ পড়ে, মাছের বংশ বিস্তার ও
বৃদ্ধি ঘটে, সেচের জন্য বৃষ্টি যে পরিমান পানি
বয়ে আনে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে সেসবের অর্থনৈতিক মূল্য কত? বৃষ্টির কারণে জমির শক্তি
বৃদ্ধি পায়, বৃক্ষ দ্রুত বর্ধনশীল হয় তার কি কোন অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা গেছে?
অতি বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয় তার চেয়ে কতগুণ সম্পদ কুক্ষিগত করে অর্থনীতির
বারোটা বাজানো হয়েছে। টাকা পাচারের পরিমাণ কি এক মৌসুমের বৃষ্টি জনিত ক্ষতির চেয়ে বেশি? তবু আনাড়ী প্রশ্ন জাগে বৃষ্টির প্লাবণে যে মৃত্যুর
ঘটনা ঘটে, মাদক ও সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর পরিমান তার কত গুন? দ্বীন প্রতিষ্ঠা খেলাফত
প্রতিষ্ঠা, মার্কিন বাহিনীর সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমনের নামে মৃত্যুর পরিসংখ্যানটা কতগুণ
ব্যাপক!
বৃষ্টি
ধুয়ে মুছে সব সাফ করে দেয়, হাজারো জীবানু ধ্বংস করে, ক্ষতিকারক কীট পতঙ্গের বংশ ধ্বংস
হয় আবার ভুয়া সড়ক মেরামতের ক্ষত সামনে এনে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় লুটপাটের প্রকৃত
চেহারা। বর্ষায় প্রয়োজনমত বৃষ্টি হলে কত লক্ষ টন মাছ ও কি পরিমাণ ফলজ উদ্ভিদের, ফসলের
বৃদ্ধি ঘটে তার পরিসংখ্যান না জানা থাকলেও অনুধাবন করা যায় এর অর্থনৈতিক মূল্য নিরূপন
করেনা কেউ। অথচ অতিবৃষ্টি জনিত ক্ষতির মূল্য নিরূপণ উদগ্রীব হয়ে হিসেব হয়। বৃষ্টি কোনকালেই কোন জনপদে ক্ষতির কারণ হয়নি
বরং বৃষ্টির স্বল্পতা বিরান করেছে জনপদকে। বৃষ্টি স্রষ্টার অপূর্ব লীলা নিকেতন ছন্দময়
আর্শীবাদ। প্রকৃতির এই পবিত্র দানের মর্মার্থ অনুধাবন না করে আল্লাহ্র আইন ও ইসলামের
হেফাজতের নামে বিভৎস বর্বরতা, রুক্ষতা, ক্ষুদ্রতা কতই না বেমামান? মানুষের সব সমস্যা
ক্ষুদ্রতার কারণ কি প্রকৃতি বিমুখতা নয়? উগ্রপন্থি এসব ধর্মজীবীরা কোন কালেই প্রকৃতির
একটি দানের অন্তর্নিহিত সত্য অনুধাবনে সক্ষম হয়নি। এরাই সুরা আর রাহমানের ভাষায় অবদান
অস্বীকারকারী। বৃষ্টি জমিনের প্রাণকে জাগিয়ে তোলে। ধরনীকে কোমল, মোহনীয়, সৌন্দর্যময়
করে।
কালিদাস,
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, হাল আমলের শামসুর রাহমানের চিন্তা-চেতনে বৃষ্টি যেসব
অনাহত সৃষ্টি করেছে তা পাঠক মাত্রই জানে। কিন্তু নবী মোহাম্মদ, যীশু, গৌতম বুদ্ধ, কৃঞ্চ’র
কাছে বৃষ্টি কেমন ছিল ?
বৃষ্টির
পানিতে মাছের বাধভাঙা আনন্দ, কি যে আনন্দ মাছের স্বভাব না হলে কি অনুভব করা যায় ? মাছ
কেন বৃষ্টির ছন্দে দারুন আনন্দে মৎস শিকারীর ফাঁদে পা দেয় সেটা আবিস্কার করা জরুরী।
গৃহিণীর কড়াইয়ে মাছের দোপেয়াজী বর্ষার বৃষ্টির দিনেও দারুন স্বস্তি বয়ে আনে। বৃষ্টির
খিচুড়ি অন্য দিনের খিচুড়ির মত নয়।
ঘরের
চালার ফুটো দিয়ে ঘরে ঢুকে ঘুমানোর - ঘোরাফেরার, রান্নাকরার স্থান ভিজিয়ে দেয় বলে অতি
বৃষ্টি সাময়িক বিড়ম্বনা বাড়ায়। বেশিক্ষণের
ভারি বৃষ্টি খেটে খাওয়া দিনমজুরের খাদ্য আহরন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে বলে
তারা সাময়িক দুচিন্তায় পড়েন। ঘরে চাল-ডাল না থাকলে, শুকনো কাঠ খড়ি ভিজে গেলে রান্নার
কষ্ট ষ্পষ্ট হয়ে উঠে। জীবনটা যে ভাঙ্গা গড়া তাও বোঝে নদী তীরের মানুষজন বৃষ্টি যখন প্লাবন হয়ে উঠে। মানুষ যে শরনার্থী
তা অতি প্লাবনে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা টের পায়।
বর্ষায়
গাছের সবুজ পাতা একেক রকম রূপ নেয়। সবুজ কিন্তু অনেক রকম সবুজ। লাল টুকটকে ফুল, পাতাবাহার,
কদম, কেয়া, গোলাপ তবু অন্য সময়ের চেয়ে একটু পরিনত, সতেজ। গাছপাতারা বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে
প্রকৃতিতে যে আভা ছড়িয়ে দেয় তা সব জীর্নতাকে, ধুলোমলিনতা ও সব বার্ধক্যকে হার মানায়।
বৃক্ষরা পূর্ণ মায়াবী নান্দনিক যৌবনা হয়ে উঠে। বর্ষার বৃষ্টি বৃক্ষের বসন্ত যৌবন। যৌবনের
সৌন্দর্য মেলে ধরে বৃক্ষরা। বৃক্ষের শাখায়, কোটরে বৃষ্টিভেজা পাখির অনুরাগী চাহনী কি
বলে, কি বলতে চায় তা জানা হয়নি আজও। ঘন বৃষ্টিতে পাখিদের মন কোন ব্যাকুলতায় উড়ু উড়ু
করে, কোন বিরহ আর্তনাদ সুর তোলে? পাখিদের পৃথিবী কি বৃষ্টিস্নাত, ভরা বর্ষায় প্রকৃতির
সুর ছন্দে দারুন নিরুদ্বেগ হয়ে উঠে? দারুন এক ঐক্যতানের সুর অনুভব করে পাখিরা।
রঙিন
প্রজাপতি গাছের পাতায় পাতায় আটোসাটো হয়ে মিশে যায়, হারিয়ে যায়, অবিচ্ছেদ্য সংযোগে নিজের
অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়। প্রেমিক-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুরাগীর কাছে বৃষ্টির দিনে রাগ
মেঘ মাল্লার দারুন আবহাওয়া তৈরী করে। তনুমনে এক দারুন অনুরনন তোলে। বৃষ্টির ছন্দ রাগ
হয়ে অপরূপ রূপ নেয়। রাগ হয়ে যায় রূপ। প্রকৃতির ভিতরে লুকানো সব হাহাকার-আর্তনাদ মানবিক
সৌন্দর্যে এসে আশ্রয় নেয়। বিরহ যে সব যাত্রার প্রাণ শক্তি তাও বলে যায় বর্ষার প্রকৃতি।
প্রকৃতির
অনবদ্য সৃষ্টি বৃষ্টি মৃদুমন্দ পায়ে এসে কোন সে অজান দূরে নিয়ে যায়! দূরের মাঠে, ঘন
পল্লবিত বাগানে, মেঠো রাস্তায়, কর্মক্লান্তিতে বৃষ্টি বুনন ছন্দ গেথে দেয়। প্রেয়সীর
জন্য ব্যকুলতা চরমে পৌঁছায়। নদীমাতৃক, উর্বর মাটির বাংলায় নদী ও বৃষ্টি একই সুরের
যুগলবন্ধি। এই মহাযাত্রায় বৃষ্টির ছন্দ অনুভূতি-অনুভবের হৃদয়ে পরম আনন্দের বার্তা বয়ে
নিয়ে আসে, কর্কশ কঠিন জটিল মনস্তত্বের বিরুদ্ধে বৃষ্টির এই নান্দনিক বার্তা বলে উঠে-এই
বিশাল প্রকৃতিতে বৃষ্টির ছন্দের মত ছন্দশীল হও, সহজ হও, সবার হও, সমগ্র সৃষ্টির বন্দনা
করো, মানবিক হও, প্রেমময় হও, সতেজ হও। বৃষ্টি বলে তোমাদের বাহাদুরি জমিনে মসজিদে মন্দিরে
যতই করো এই বিচ্ছিন্নতা থেকে বের হয়ে সবার হয়ে উঠো। প্রকৃতির সুরে সুর মেলাও, সব মানুষের
অন্তরকে প্রশস্ত করো মানবিক প্রেম দিয়ে, প্রেম প্রাচুর্যতা দিয়ে। কল্যানব্রতী হয়ে উঠো,
জমিনের সব সৌন্দর্যকে জাগিয়ে তোলো ছন্দ সুরে। বিভাজন বিভেদ নয়, ঐক্যতানের মালা গাথো।
জমিনকে প্রাণ, নদীকে যৌবন-স্রোত-প্রবাহ, বদ্ধ ডোবা-পুকুর-খাল-বিল-বৃক্ষ-লতাপাতায় সঞ্জীবনী
রূপ সবই বয়ে আনে বৃষ্টি।‘কবে হবে সজল বরষা/ আমি চেয়ে আছি সেই ভরসায়/ আমার এই আধলা দশা,
মিটবে কত দিন পরে’- লালন সাঁইজীর এই বাণীর বৃষ্টিই সত্য অনুসন্ধানী মানুষের কাছে বৃষ্টির জন্য প্রকৃত অপেক্ষা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন