কবে হবে............
৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস
*
রাজনৈতিক সংকীর্ণতা এবং নৈতিক দুর্বলতার উর্দ্ধে উঠে সরকার কি পারবে সত্যকে পরমসত্যে
প্রতিষ্ঠিত করতে?
সংলাপ
॥ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) প্রায়
দশ লক্ষ সংগ্রামী জনতার সমাবেশে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’-এই ঘোষণার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাক্ষী লক্ষ মানুষ এখনো বেঁচে আছেন এবং তাঁরা গর্বের সঙ্গে সেই
দিনটির কথা স্মরণ করেন। আর সেই স্বাধীনতার আহ্বানের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। প্রস্তুতি
নিচ্ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের। ১৯শে মার্চ ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে পাকিস্তানী হানাদারদের
বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় বাঙালি সৈনিক ও জনতার সশস্ত্র যুদ্ধ, বর্তমানে গাজীপুর চৌরাস্তার
জাগ্রত চৌরঙ্গী আজও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই অমর স্মৃতি বহন করছে। তাই জাতি চায়
৭ই মার্চ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা হউক যার মধ্য দিয়ে অবসান হবে বহু মিথ্যাচার এবং
স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির। সত্যকে পরমসত্যে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে
বাংলার বাঙালিকে আবার এক হতে হবে। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলার বুকে শান্তি (ইসলাম)।
অপরদিকে,
জাতির বাসনা ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতের স্মৃতিকে ধারণ করে দিনটিকে গণহত্যা দিবস
হিসেবে পালন করা হোক। কারণ, ওই রাতে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে সৈয়দপুর,
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনায় লক্ষাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। রাজধানী
ঢাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের এই গণহত্যায় এক রাতে নিহত
হয় ৫০ হাজারেরও বেশি লোক।
পাকিস্তানী
সেনাবাহিনীর সেই বর্বরতা বিশ্বেও গণহত্যার ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ঘটনা। ওই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের
ইতিহাস, দলিলপত্র, ভিডিও বা ছবি দেখে বিশ্ববিবেক চিরদিন অপরাধীদেরকে ধিক্কার জানাতে
পারবে। মানুষ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বিশ্ববিবেক। এর মধ্য দিয়ে আরও জোড়ালো হবে গণহত্যায়
যুক্ত পাকিস্তানী বাহিনীর বিচারের দাবি। ২৫শে মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে
স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার
আন্দোলন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এক শ’ বছর আগে সংঘটিত আর্মেনিয়ার গণহত্যার স্বীকৃতির
জন্য সে দেশের সরকার ও জনগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করে ৯ই ডিসেম্বরকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক
গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা আদায় করেছে।
সাম্প্রতিক
সময়ে বিশ্বে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। সম্প্রতি লাহোরের একটি
শিশু পার্কে জঙ্গীদের বোমা হামলায় অর্ধ শতাধিক নিরীহ নারী-পুরুষ নিহত এবং তিন শতাধিক
আহত হয়েছে। বলতে গেলে বর্তমান বিশ্বে পাকিস্তান রাষ্ট্রটিই তথাকথিত ধর্মের নামে জঙ্গীবাদের
পৃষ্ঠপোষকের স্থান লাভ করেছে। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আজকে জঙ্গীবাদ যে মাথাচাড়া
দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে পাকিস্তানেরই বিভিন্ন
গোষ্ঠী। মার্কিন যুক্তরাষ্টের পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি এক সংবাদ বিশ্লেষণে
লিখেছে, আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থানে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাত
রয়েছে। আসল কথা হচ্ছে, রাষ্ট্র হিসেবে ইয়াহিয়া-ভুট্টোর পাকিস্তান যে কত বড় বর্বর তা
বাঙালি জাতিকে চরম পরীক্ষা দিয়ে টের পেতে হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বিশেষ করে ২৫শে মার্চের
পর। ২৫শে মার্চের সেই বর্বরতার ইতিহাস গোটা বিশ্বকে জানানোর জন্য এই দিনটিকে বাংলাদেশের
গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা তাই এখন সময়ের দাবি।
স্বাধীনতা
যুদ্ধের ইতিহাস তথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে
তুলে ধরার জন্য এসব বিষয়ে বর্তমান সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ আশা করছে সচেতন দেশবাসী। বঙ্গবন্ধুর
জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনটিই হচ্ছে ৭ই মার্চ, বলা চলে বাঙালি জাতিরই শ্রেষ্ঠ দিন এই ৭ই মার্চ।
এই দিনে কোটি কোটি বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কথাটিই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে
উচ্চারিত হয়েছিল। ৭ই মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে বাঙালির প্রতিটি ঘরে
এই দিনটিকে উৎসব হিসেবে পালন করা না হলে বাঙালির জীবনে সত্য কখনো প্রতিষ্ঠিত হবে না।
আর এর কারণে মিথ্যাচার ক্রমেই দানা বেধে উঠবে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরাই শক্তিশালী
হবে, ব্যাহত হবে দেশ ও জাতির অগ্রগতি। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী
লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত বলেই তাদের কাছে সচেতন মহলের প্রত্যাশা- একদিকে
বাঙালির জাগরণের দিন এবং এই কারণে বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে পাকিস্তানীদের
পরিচালিত-‘অপারেশন সার্চ লাইট’সহ সকল গণহত্যাকে স্মরণ করার জন্য ৭ই মার্চকে স্বাধীনতা
দিবস এবং ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন