বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

সময়ের সাফ কথা.... কাল্পনিক তন্ত্রের ফাটকে....


সময়ের সাফ কথা....
কাল্পনিক তন্ত্রের ফাটকে....

নজরুল ইশতিয়াক ॥ জাতীয় ঐক্য, গণ ঐক্য, গণতান্ত্রিক ঐক্য, ঐক্যমত-ঐক্যবদ্ধ এসব কথার কথামালার বাকোয়াজ দূষণে দুষ্ট আমাদের রাজনীতি অঙ্গন। কথায় কথায় ঐক্যমতের কথা বলা হয়। কথায় কথায় বলা হয় রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের জানমাল নিরাপত্তা বিধানের, সরকারের দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে কিছু স্বঘোষিত সুশীল ও কাল্পনিক পান্ডিত্য নির্ভরদের এ নিয়ে পরামর্শ  পুরো দেশের রাজনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এসব রাজনীতি তথ্য বিক্রেতাদের কথা বলার আগ্রহ ও উৎস সন্ধান করলে ভয়ানক সব চিত্র প্রকাশ পায়। মেরুদন্ডহীন এসব পুতুল কোন না কোন মহলের ক্রীড়ানক। বড্ড অসহায় এদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চিন্তন জীবন। আজকের বাংলাদেশের সব সংকটের  উদ্যোক্তা সুশীল সজ্জন বুদ্ধিমান শিক্ষিত দাবিদার নাগরিকরা। কথায় পটু, ষড়যন্ত্রে পটু এসব ব্যক্তিদের তালিকা ধরে একটা একটা করে পরীক্ষা করলে এমন সব ভয়ানক তথ্য বের হয়ে আসবে যা আরব্য রূপকথার লেখকদের কল্পনারও অতীত। অধিকাংশ চেনামুখগুলোই অভ্যাস সংশোধনের অতীত। 
যারা রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেন তারা কি নিজেদের দায়িত্ব সম্বন্ধে অবগত? তারা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা, চরিত্র, মূল্যবোধ, আদর্শ, দর্শন কি জানেন? যারা এসব নিয়ে স্বোচ্চার তাদের সংগঠনগুলোর দার্শনিক অবস্থান কি তা অনুধাবন করেন? সত্য এটাই-রাজনীতির ব্যবসায় জড়িত তথাকথিত নেতাদের নিজেদেরই কোন দর্শন বা দার্শনিক চরিত্র নেই। এরা ঐক্যমতের আহ্বান করেন, গণতন্ত্র সুশাসনের সবক দেন অথচ এদের নিজেদের সংগঠনগুলোর কোন জনভিত্তি নেই, দার্শনিক ভিত্তি নেই, এমনকি কোন কর্মসূচী বা অঙ্গীকারও নেই।
সংবিধানে রাষ্ট্রের দার্শনিক চরিত্রের প্রতিফলন থাকে। বাহাত্তরের সংবিধানে সুষ্পষ্টভাবেই রাষ্ট্র কোন পথে কিভাবে কোন নিক্তি মেপে যাবে তার দিকনির্দেশনা ছিল। পরবর্তীতে ইচ্ছে মত কাটা ছেঁড়ার কারণে রাষ্ট্রের দার্শনিক চরিত্র হারিয়ে গেছে এবং ফলশ্রুতিতে বর্তমানে ঐক্যমতের নানা কাল্পনিক ও স্বরচিত ফর্মূলা হাজির হচ্ছে। যারা এসব নিয়ে মাতামাতি করছেন তাদের অধিকাংশেরই কোন দার্শনিক চরিত্র নেই। কেবলমাত্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থে পানি ঘোলা করার জন্য বলছেন। যেখানে একটিপক্ষ বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালির চিন্তন প্রক্রিয়াকে উপজীব্য করে এগিয়ে যেতে চায়, সেখানে অন্যপক্ষটি তাদেরকে উপড়ে ফেলতে চায়, তাহলে ঐক্য হবে কিভাবে? যেখানে লুটপাট, ভোগ, পাকি..প্রেম, আধিপত্য ও ধর্মীয় ওহাবী বণিকদের ব্যবসার পথ প্রশস্ত করার জন্য সব কিছু করা হয় সেখানে পারস্পারিক সহঅবস্থান সম্ভব কিভাবে? প্লাষ্টিকের ফুলের কারুকার্য থাকতে পারে কিন্তু কোন সৌন্দর্য সৌরভ মাধুর্যতা নেই।
ঐক্যমত হয় কখন? ধনীর সাথে গরিবের, মালিকের সাথে দাসের, শত্রুর সাথে মিত্রের, ঘাতকের সাথে অসহায়ের, সেবকের সাথে সেবাবঞ্চিতদের, শোষকের সাথে শোষিতের, মিথ্যাবাদীর সাথে সত্যদর্শীর কোন কালেই কি বন্ধুত্ব হয়! মাতৃগর্ভে ভ্রণ হত্যার ঘাতকদের সাথে জননী জন্মভূমির কোনকালেই মিত্রতা হতে পারে না। দেশজন্মের ঘাতকের সাথে কিভাবে দেশপ্রেমিকের ঐক্যমত হবে। শান্তি বিনষ্টকারীকে দমন করেই তো শান্তি স্থাপন হয়। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী-সৃজনশীলতার চর্চা কারীদের সাথে কিভাবে স্বরচিত কাল্পনিক ধর্মজীবিদের সহঅবস্থান থাকবে? অন্ধকারে যে প্রাণী চরে বেড়ায় তারা দিনের আলোয় বেঁচে থাকবে কিভাবে? বিষধর সাপ বিষের ভারে সুযোগ পেলে কামড় মারবেই। দাঁত ভেঙ্গে দেয়া না পর্যন্ত সতর্ক থাকাই সঙ্গত।
রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি না থাকলে রাষ্ট্র চরিত্রহীন হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রপরিচালনার সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকেন তারা সবাই যখন লুটপাটের নানা কৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত থাকেন। রাজনীতির নামে ভাগবাটোয়ারার জন্য যখন শত শত গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করে তখন সমাজে লুটেরাদের ক্ষমতা বাড়ে, বিভাজন সৃষ্টি হয়। সমাজ চরিত্রহীন হয়ে পড়ে। অসম প্রতিযোগিতা বাড়ে, নিরাপত্তাহীনতা উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়। স্মরণ রাখতে হবে রাষ্ট্র একটি বৃহৎ সমাজ। কাঙ্খিত রাষ্ট্র সমাজ সৃষ্টি কোন কাল্পনিক তত্ত্বে হয় না। সুষ্পষ্ট লক্ষ্য অঙ্গীকারের পথ ধরে বাস্তবতার শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র এগিয়ে যায়। ধর্মের নামে ব্যবসা, ধর্মের নামে অধর্ম, খুন হত্যা নির্মমতা, গুহা দোকানদারিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধ সুশাসনের নামে যা ইচ্ছা তাই করার যে প্রবণতা এতদিন চালানো হয়েছে তারই ফল ভোগ করছি আমরা। এসবই রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ব্যর্থতা এবং কৃত কর্মের ফল। সুশাসনের ব্যর্থতা, দৃষ্টান্ত স্থাপনের ব্যর্থতা, অদূরদর্শীতায় রুগ্ন রাজনীতির চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছে। সত্যের রাজনীতি ব্যর্থ হচ্ছে ফলে তার ফলাফল ভাগবাটোয়ারার গণতন্ত্র নিয়ে খুনোখুনি তান্ডবলীলা চলছে।  ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আন্দোলন সংগ্রাম স্বাধীনতা সাবভৌমত্ব উন্নয়নসহ সব কিছুর সাথে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামীলীগকেই আজ একটি চরম পরিস্থিতির মূখোমুখি হতে হচ্ছে। বাঙালির দলটিকে তটস্থ থাকতে হচ্ছে তাদের নিজেদেরই অপরিনামদর্শীতার কারণে। বামপন্থিদের শেষ ভরসার আওয়াজটুকুও ক্ষীণ হয়ে আসছে। দেশের জনগণ বামপন্থিদের ক্ষুদ্রতা অজ্ঞতা অহংকারের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়ার দিনক্ষণ গুনছে। বাস্তবতা অনুধাবনে সক্ষম বামপন্থিরা সুযোগ বুঝে নিজেদের বিক্রি করে যাচ্ছে আর কাল্পনিকতার ফাঁদে আটকা পড়ছে।
আজকে যারা দেশ দেশ বলে চিৎকার করছে সেই আওয়ামলীগ কি নিজেদের আয়নায় চেহারা দেখবে না, আর কতদিন ফাঁদ পাতা প্রতারণার রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে চলবে? তাদের কোন কোন নেতার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা আছে? কোন কোন নেতা জানে আওয়ামলীগ কি? বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে কি-ই বা সম্পর্ক এই দলটির? ক্ষমতায় না আসতে পারলে বহু নেতা আত্মগোপনে থাকেন আর জনগণের উপর খড়গ নেমে আসে। এই জনগণ কারা কেন কোন কারণে তারা আওয়ামলীগকে সর্মথন করে তা আওয়ামলীগ জানে না। নিরবে নিভৃতে আপন মহিমায় চিন্তায় লক্ষ কোটি মানুষ বৃহত্তরস্বার্থে তাদের পাশে থাকে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগের বেশিরভাগ রাজনীতিকের কোন উপলব্ধি বোধ নেই বললেই চলে।  দলটির উপর পর্যায় থেকে শুরু করে বহু নেতা মনস্তাত্তিক ভাবে জামাত ও হেফাজতি। লুটপাট করাই তাদের নেশা পেশা। দেশে বিদেশে ঠিকানা। বিমানের টিকেট বুকিং করাই থাকে। সন্তান পরিজন সম্পদ সব বিদেশে তবু দেশের মাটিতে বসে বড় বড় কথা বলেন আরো কিছু পাবার আশায়। দলটির নেতৃত্বের প্রতি পৌঢ় রাজনীতিকদের দ্বি-চারিতা। দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম নেতাদের মর্যাদা সংকট দলটির বাস্তবে জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। শুধু দ্বি-চারিতা নয়, বহুচারিতার দোষে দুষ্ট অপাংতেয় হাজারো তথাকথিত নেতা। অনেক মুখচেনা নেতা প্রকৃতপক্ষে পরিবার আত্মীয় স্বজন সমাবেশের নেতায় পরিণত হয়েছেন, জননেতা নয়।  এদেরকে দিয়ে দেশ কত দুর এগুবে তা দলীয় নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখার সময় এসেছে। উন্নয়ন উন্নয়ন বলে, গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে যে সব পরিচিত মুখগুলোর শ্রুতিবিরক্ত আওয়াজ কানে আসে তাতে তাদের অন্তসারশূন্য অভিনয়ই শুধু প্রকাশ পায়। উন্নয়ন বলতে কার উন্নয়ন, কিসের উন্নয়ন, কোন জনগণের উন্নয়ন, কোন গ্রুপের উন্নয়ন হয়েছে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলে এ সব তথাকথিত নেতাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে। দেশের মানুষ যাদেরকে শত্রু গণ্য করে যাদেরকে রাজনৈতিক দল মনে করে না তাদের সাথে আওয়ামীগের পার্থক্য কোথায় তা এখন অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া দুস্কর। 
চাটুকারিতা গীত গাইলেই নেতা হওয়া যাবে, মোসাহেবীর কলাকৌশল জানলেই নেতার অনুগত থেকে সব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে এমনটা ভেবে যারা দলটির মধ্যে রাজনীতি করছেন তাদের অবস্থান কোথায় এটা তারা নিজেরাও জানেন না। নষ্ট ভ্রষ্ট ওই আওয়ামীলীগ রাজনীতিকরা কি বায়ান্ন-বাষট্টি-সত্তর-একাত্তর-নব্বই পার করেছেন? এটা কি সেই দল যে দলের আদর্শিক নেতা চোদ্দ বছর জেল খেটেছেন তবু আপোষ করেননি, মাথা নিচু করেননি, লুটপাট করেননি! এটা কি সেই দল যার নেতা অসহায় গরিব মজুরকে বুকে টেনে নিতেন একসাথে খেতেন! দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পৃথিবীতে শোষণহীন বাংলা গড়তে আদর্শিক রাজনৈতিক দর্শন দিয়ে দল গঠন করেছিলেন জনগণের ভালোর জন্য অবশেষে জীবন উৎসর্গ করে বাংলার বন্ধু হয়ে থাকলেন। যতদিন বাংলা থাকবে, একজন বাঙালিও থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুও থাকবেন তাদের অন্তরে। আওয়ামীলীগের রাজনীতিকরা ভুলে যাচ্ছেন কতটা উত্তাল বৈরি সময়ে শেখ হাসিনা দেশের টানে ফিরে এসেছিলেন! বারবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছেন এটা কি আওয়ামীলীগের নষ্ট ভ্রষ্ট নেতারা আত্মসমালোচনার মাধ্যমে কি তলিয়ে দেখছেন? কেন এদেশের মানুষ, এদেশের শান্তিপ্রিয় সত্যানুসন্ধানী মানুষরা আওয়ামীলীগকে পর্দার অন্তরাল থেকে সর্মথন করে এটি বুঝতে ব্যর্থ রাজনীতিকরা। ব্যর্থতা বাড়তে বাড়তে সীমা অতিক্রম করলে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে তাদের সরে যেতেই হবে। 
লুটেরা ঘুষখোর দখলদার চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ঘাতক সুদের কারবারী প্রতারকের সাথে একই সমাজে শোষিত বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্তরা ততদিনই চোখ বুঝে সব সহ্য করে যতদিন কিছু করার থাকেনা অথবা পিট দেয়ালে না ঠেকে। বাধ্য হলে বারবার মার খেতে খেতে এক সময় যা ইচ্ছা তাই করে। রাজনীতিকদের দ্বি-চারিতা, বামপন্থিদের আত্মঅহংকার ও অদূরদর্শিতা আর সুশীল সজ্জনেরা এখন মূর্খের সর্দার আর না হয় কাপুরুষ। নষ্টের মূল ভদ্রবেশি ঘাতকেরা, নিচের তলার মানুষেরা নয়।
দলে ও সরকারে তল্পিবাহক অরাজনীতিক লুটেরা অবাঞ্ছিতদের উপড়ে ফেলতে না পারলে বাংলাকে ঘিরে যে অন্ধকার ঘণীভূত হচ্ছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বেসুরো যন্ত্রীদের দৌরাত্ব না কমাতে পারলে জনবিচ্ছিন্নতা যে বাড়ছে তার জন্য চরমমূল্য দিতে হবে বাঙালি জাতিকে। জনগণের সাথে একাত্মতা প্রতিষ্ঠায় সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণে যত বিলম্ব হবে তত ক্ষতিগ্রস্থ হবে ঐতিহ্যবাহী দলটি।
সুষ্পষ্টভাবেই বলা যায় দেশের ও দলের শত্রুকে যারা চিহ্নিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে দুর্নীতিকে সহযোগিতা করেছে তাদেরকেও জনগণের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। উগ্রবাদীতার যে বিষবৃক্ষ, লুটপাটতন্ত্রের যে বাজার বড় হয়ে উঠেছে তার জন্য দল হিসেবে আওয়ামলীগ ও বামপন্থিদের দায় নিতেই হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন