বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪

কমরেড হাজী সাহেবদের কাছে জাতির প্রত্যশা



কমরেড হাজী সাহেবদের কাছে জাতির প্রত্যশা

মহিবুল্লাহ্‌ বাদশা ॥ মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন, যে ব্যক্তির হজ আল্লাহ্‌র দরবারে কবুল হয়ে যায়, তিনি পাপ মুক্ত হন। এ সুযোগটি কোন মুসলিম জীবৎকালীন অবস্থায় হাত ছাড়া করতে চান না। তবে, সামর্থ্যের প্রশ্নটি অবশ্যই থাকে, সেটি সবার জন্য বাস্তবতার রাস্তা দেখায় না। যারা সে সুযোগটি সময়মতো পেয়ে থাকেন তারা অবশ্যই নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যেদিন প্রথম ওমরাহ্‌ পালন করে বাবাকে জানিয়ে ছিলাম- ‘বাবা, ওমরাহ্‌ হজ পালন করেছি এবং আপনার নামে উৎসর্গ করেছি। বাবা জানিয়ে ছিলেন তার অন্তরে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে’। কারণ বাবার আর্থিক এবং শারীরিক সামর্থ্য কোনটাই তখন ছিলো না। কিন্তু অনুভূতিটি তখনও প্রবল ছিলো। এই অনুভূতি থেকে একজন ইসলাম বিশ্বাসীকে হজ কী পরিমাণ উজ্জীবিত করে সেটা আমরা অনুমান করতে পারি।
আমাদের দেশে হাজীদের সংখ্যা প্রতি বৎসরই বাড়ছে। এবৎসর সে সংখ্যাটা প্রায় লাখের কাছাকাছি। সাধারণ হাজীদের সাথে রাজনীতিকদের হাজী হবার প্রবণতাও এখন তীব্র। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের হাজী হবার মাত্রাটা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। ক্ষমতা হাতে থাকলে অনেক সহকারী পাওয়া যায়, যাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে একটু সময় বের করে নেয়ার সুযোগ পাওয়া কঠিন হয় না। আর সে কারণেই রাজনীতিক হাজীদের কাছে, সাধারণ মানুষের নয়া আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়। তার উপর হাজী সাহেব যদি হন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন রাজনীতিক। হাজী দানেশও ছিলেন একজন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী, তিনি অবশ্য ক্ষমতার রাজনীতি করেন নি। কিন্তু গণমানুষের অধিকারের লড়াইতে কোনদিন পিছ পা হন নি। মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি এঁর কথা আমরা সকলে জানি, যে পরিমাণে তিনি স্ব-ধর্মে আস্থাবান ছিলেন, সেই পরিমাণে তিনি সমাজতন্ত্রেও বিশ্বাসী ছিলেন। সুতরাং সমাজতন্ত্রী হাজী হতে পারবে না এমন কথা কোথাও লেখা নেই।
বরং সমাজতন্ত্র- সাম্য, সমতা, ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করে- ইসলামেও তাই। তাহলে কমরেড হাজী সাহেবরা এবার যদি সত্যি উভয় বিশ্বাসকে সমন্বয় করে তাদের মন্ত্রণালয় চালাতে শুরু করেন,            তাহলে মন্ত্রণালয়ের গতানুগতিক চেহারাটাই যে বদলে যাবে তাতে সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ থাকে না। যারা হজ করতে যান তারা তওবা করেন। জীবনের ভুল-ত্রুটি ও অপরাধের তওবা। আবার ওয়াদাও থাকে জীবনের বাকি দিনগুলো সেই পুরনো রাস্তায় ফিরে না যাওয়ার। আল্লাহ্‌র কাছে করা এই ওয়াদার বাস্তবতা আমরা আমাদের সমাজ জীবনে খুব একটা দেখতে পাই না। যদি এমনটা হতো, এই এক লক্ষ মানুষ যারা হাজী হয়ে এসেছেন, তারা আর পাপের জীবনের ধারে কাছেও যাবেন না এবং তাদের পরিবার পরিজনকেও যেতে দেবেন না, তাহলে আমাদের সমাজে যে বিপ্লব হয়ে যেতো সেটা নিশ্চিত। কিন্তু হয় বিপরীত। আমাদের এখানের একজন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা বছর তিনেক আগে হজ করে এসেছেন, মানুষজন এখন তাকে মিথ্যুক হাজী বলে ডাকেন। আমার অভিজ্ঞতা নেই, তবে অনেককেই বলতে শুনেছি তিনি নাকি মসজিদে দাঁড়িয়েও মিথ্যা বলেন। কমরেড হাজীদের কাছে আমরা নিশ্চয়ই এমনটা আশা করবো না। কারণ সমাজতন্ত্রীরা সংস্কৃতিতে গভীর বিশ্বাস রাখেন, তাই মিথ্যা বলাটা সেখানেও সম্মানের নয়, আর ইসলামের তো কথাই নেই, একেবারে নিষিদ্ধ। রাজনীতিক হাজীরা যদি সেটি মনে রেখে, গণমানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট থাকেন তাহলে শান্তি আসবেই। বাস্তবে রাজনীতিক হাজীরা সে পথের বিপরীতে, এবার কমরেড হাজী সাহেবরা সে কাজটি শুরু করতে পারেন। এদেশের সাধারণ মানুষ এইটুকু আশা করতেই পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন