সময়ের সাফ কথা
....
গ্রহণ-বর্জনই রূপান্তরের
মূল কারণ
আইনুল হাফিজ ॥ তিনটি পৃথক পাত্রে গাজর, ডিম ও চা পাতা সিদ্ধ
করলে শক্ত গাজরটি নরম হয়ে যাবে, নরম ডিমটি শক্ত হয়ে যাবে আর চা জলের রঙ এবং স্বাদকেই
পরিবর্তন করে দেবে।
প্রত্যেকটি বস্তু একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে- জল
এবং অগ্নি। কিন্তু একেকটি বস্তু একেকভাবে অগ্নির উত্তাপ এবং জল গ্রহণ-বর্জন করেছে।
গাজরটি ছিল শক্ত ও অনমনীয়। কিন্তু ফুটন্ত জলে তা নরম ও দুর্বল হয়ে গেল। ডিমটি ছিল নাজুক
ও ভঙ্গুর। ডিমের পাতলা বহিরাবরণ এর ভেতরের তরল অংশটি রক্ষা করছিল। জল ও অগ্নির মিথষ্ক্রিয়ায়
তা শক্ত হয়ে গেল। কিন্তু চা-জলের মধ্যে নিজের গুণ ও ধর্ম সঞ্চার করে জলকেই বদলে দিল।
আমি কী গাজরের মতো, দেখতে শক্ত কিন্তু কষ্টে ও প্রতিকূলতায়
নরম ও দুর্বল হয়ে যাই? আমি কী ডিমের মতো, প্রথমে নমনীয় থাকি কিন্তু কষ্ট, উত্তাপ ও
বাধা-বিপত্তিতে শক্ত হয়ে ওঠি? নাকি আমি চায়ের মতো? যা জলকেই বদলে দেয়। আমি কী সেই পরিস্থিতিকে
বদলে দিতে পারি যে পরিস্থিতি আমাকে বদলে দিতে চায়? আমি কী চায়ের মতো হতে পারবো- যে
বুকের রস দিয়ে রক্ত বর্ণ করে দেবে বর্ণহীন জল? আমি কী পারবো আমার ঘ্রাণ আর স্বাদ ছড়িয়ে
দিতে?
লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সম্যক পরিবেশই যথেষ্ট নয়। পরিবেশ থেকে
কে কী গ্রহণ-বর্জন করবে সেটাই রূপান্তরের মূল কারণ। আমি তো খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত
হয়েই আছি! যে কোন মুহূর্তে ডাক আসতে পারে চলে যাওয়ার। তাহলে কেন আমি সেই পথে যাবো না,
যে পথে যেতে আমার বিবেক বলছে আমাকে?
চা পান করলে ঘুম চলে যায়- সে তো সবাই জানে। কথিত আছে বোধিধর্ম
একবার ধ্যানে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। অতঃপর ক্রুদ্ধ হয়ে চোখের পাতাদুটোই ছুরি দিয়ে কেটে
ফেললেন। বোধিধর্মের চোখের পাতা থেকে উৎপন্ন হলো চা গাছ। সেই থেকে চা ধারণ করছে পরিবেশকে
রূপান্তরিত করার ধর্ম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন