শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৪

একটা জীবনই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট

একটা জীবনই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট

সাদিকুল হক ॥ মানুষ কেন বাঁচে, কী নিয়ে বাঁচে! সবাই কি আসলে বাঁচে? বেশিরভাগই কেবল অস্তিত্ব রক্ষা করে চলে। এ ধরনের বেঁচে থাকা মানে শুধু দিন যাপনের জন্য বাঁচা। জীবন মানে কি কেবলই দিন যাপন, ভেসে বেড়ানো অজানা গন্তব্যে? তাহলে বন্যার জলে ভাসতে থাকা কচুরিপানার সাথে মানব জীবনের পার্থক্য কোথায়? মানুষ কী পারে স্রোতের টানে ভাটির দেশে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে? সত্যিকার অর্থে যিনি বাঁচেন বা বাঁচতে চান, তিনি ভেসে যেতে পারেন না গড্ডালিকা প্রবাহে। তাঁর জীবন কাণ্ডারি বিহীন নৌকা নয়। জীবনের নৌকা তরঙ্গের ঘাত-প্রতিঘাতে দুলতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ডুবে যাওয়া তো জীবনকে বাদ দেয়া।
যাদের লক্ষ্য আছে তাদের তো এক চিন্তা - আরো কতো কাজ বাকী! মানুষের জীবন একটাই বটে। কিন্তু সম্যক কাজ সম্যক সময়ে সম্যকভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ছোট একটা জীবনই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট। আইনস্টাইন ভালোবাসতেন সাইকেল চালাতে। তিনি জীবনকে তুলনা করেছিলেন বাইসাইকেলের সাথে। ভারসাম্য হারালে বাইসাইকেল ভূমিতে পতিত হয়। জীবনও তাই। জীবন সাইকেলের ভারসাম্য কিসে সুরক্ষিত হয়? জীবনতরীর কাণ্ডারি আছে কি? এই জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে না পেলে কেউ কোনো দিন সেই জীবন পাবে না, যে জীবন মানে সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকা, যে বাঁচার মধ্যে আছে আনন্দের ফল্গুধারা। জীবন একটাই। কাজেই এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে কখনও অনুশোচনা করতে না হয়।
মানুষের যখন অর্থ-সম্পদ হারায় তখন আসলে কিছুই হারায় না কিন্তু যখন আত্মপরিচয় হারায় তখন সে নিঃস্ব হয়ে যায়। কেমন করে পাওয়া যায় আত্মপরিচয়? আমি কে তা তো আমিময় আদর্শ ব্যতীত জানা সম্ভব নয়! আদর্শকে ধারণ করলেই মানুষ ধার্মিক হয়। আদর্শ আছে যার, ধর্ম তো তারই জন্য। আদর্শহীন কখনো ধার্মিক হতে পারেন না। আদর্শই হচ্ছে জীবন সাইকেলের ভারসাম্য রক্ষার মূলমন্ত্র যা জীবনকে গন্তব্যে নিয়ে যায়। আদর্শকে জীবনতরীর কাণ্ডারিও বলা চলে।
আদর্শহীন জীবন মাঝিহীন নৌকার মতোই কিংবা কচুরিপানার জীবন। কচুরিপানার কাছে পৃথিবীর চাওয়া পাওয়ার কি আছে? জগত তাদের জন্যই অপেক্ষা করে যারা কোনো আদর্শকে ধারণ করেন। তারাই মানুষকে পথ দেখান।
সুতরাং, তোমার গন্তব্য তুমিই ঠিক করে নাও। জাগ্রত করো তোমার ভেতরের সুপ্ত শক্তিকে। তবে দেখবে তুমিই তোমার গন্তব্য। কোথায় যাবে তুমি? যাবার মতো স্থান কোথাও নেই। মানুষ অসীমের যাত্রী। মানুষ আবদ্ধ নয় জন্ম-মৃত্যুর সীমানায়। মানুষের জন্মও নেই মৃত্যুও নেই। আছে এক অনন্তকালীন ভ্রমণ।
মানুষ জগতকে নিয়ে গবেষণা করছে বটে কিন্তু জীবনকে যাপন করেনি। জগত নিয়ে গবেষণার ফলে জগতের অনেক রহস্য তার কাছে উদঘাটিত হয়েছে কিন্তু জীবনকে যাপন না করার জন্য সে রয়েছে জীবনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। প্রতিটি মানুষ মহাবিশ্ব, যা আছে আমাতে তা আছে ব্রহ্মাণ্ডে। কিন্তু মানুষ নিজের দিকে না তাকিয়ে তাকিয়েছে বাইরের দিকে। আমরা জীবন প্রাপ্ত হয়েছি তা যাপন করার জন্য, জীবন নিয়ে গবেষণার জন্য নয়। জীবনকে পরিপূর্ণভাবে যাপন করা সহজ নয়। জীবন তো নয় অতীতের স্মৃতি কিংবা ভবিষ্যতের স্বপ্ন! জীবন তো আছে এখন, এই মুহূর্তটির মধ্যে। যে এই মুহূর্তটিকে উপলব্ধি করতে পারে সে জীবনকে যথার্থভাবে যাপন করতে পারে।

দুধ, ঘি, মাখন, ফল-মূলের গুণাবলীর ব্যাখ্যা যতই বিস্তৃত হোক না কেন, ভক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত তা দেহের পুষ্টি সাধন করতে অক্ষম। ঠিক তেমনি বর্তমানে বেঁচে থাকতে না পারলে, এ নিয়ে আলোচনা করা বৃথা, জীবনও বৃথা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন