বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮

স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করছে জনগণ পুনরুদ্ধার করার কিছু নেই


স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করছে জনগণ

পুনরুদ্ধার করার কিছু নেই

  • ·        দেশ কি পাক-বৃটিশ হায়েনাদের হাতে বন্দি যে তাকে পুনরুদ্ধার করতে হবে?
  • ·        দেশ বাঙালির হাতেই আছে, পাক হায়েনা ও তাদের দোসররা তাই শান্তি পাচ্ছে না।
  • ·        সর্বকালীন পাকি হায়েনারা ক্ষমতালোভী স্বার্থপ্রতিবন্ধী, তাই সচেতন বাঙালিকে মুক্তির যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

শেখ উল্লাস ॥ ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি, বাংলাদেশের নাম’। ১৯৭১ সালে এই দেশকে যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছিল এবং অপরদিকে যারা বাঙালি জাতির এই স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল দেশি-বিদেশি অপশক্তি-এই দুই মেরুর অবস্থান কখনও এক হতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আর যখন দুই বছরের মতো কম সময় বাকী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে মূহুর্তে বাঙালি জাতিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে এদেশের রাজনীতিতে তখনই আবার এই দুই মেরুর অবস্থান আবারও স্পষ্ট হয়েছে। ৭১’এর ২৫ মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে স্বেচ্ছায় পাকিস্তানে চলে যাওয়া এবং স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদারতা ও কৃপায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ গ্রহণকারী, সংবিধান প্রণেতার দাবিদার ড. কামাল হোসেন গত ২৫ অক্টোবর পূণ্যভূমি সিলেটের মাটিতে যখন বলেন, ‘জনগণকে মালিকানা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। জনগণের মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ জন্য ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, দলীয় ঐক্য নয়, জাতীয় ঐক্য। জেলায় জেলায়, থানায় থানায়, ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে হবে। বিজয় আমাদের অনিবার্য’-তখন একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলে ড. কামাল হোসেনের এই কথাগুলোকে পাকি দোসর রাজাকার দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা গোলাম আযম, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করা খালেদা জিয়া এবং জাতির জনকের কন্যাকে হত্যার নীলনকশায় জড়িত যাবৎজীবন দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধী তারেক রহমানের কথা হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়। ওদের সকলের চিন্তা ও ভাষার মধ্যে একটি গভীর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। আর এ সাদৃশ্য না থাকার কোনো কারণও নেই। পাকিস্তানী মতাদর্শের লোকেরা তাদের ভাষায় কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে এ মূহুর্তের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের মালিকানা কে কার কাছ থেকে উদ্ধার করবে? কে কাকে ফিরিয়ে দেবে? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনার ৩য় অংশে বলা হয়েছে, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল - জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে’। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭। (১)- সংবিধানের প্রাধান্য বিষয়ে এ বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্র্তৃত্বে কার্যকর হইবে’। এই মহান সংবিধান সমুন্নত রাখতে গিয়ে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের আমলে দেশে যে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। উন্নয়ন ও মানবতার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দেশরত্ন’ ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ ইত্যাদি খেতাবে ভূষিত য়েছেন। বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেশীয় অর্থে সম্পন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীও পুলিশের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থা ও সুনাম অর্জন করেছে, করছে। বাংলাদেশের বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষেরা তাদের কর্মনিষ্ঠা দিয়ে বিশ্ব শ্রমবাজারে বিরাট একটি স্থান করে নিয়েছেন এবং দেশের উন্নয়নে তারা বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। দেশের অভ্যন্তরে সরকারি-বেসরকারি খাতে কর্মজগৎ ও চাকরির বাজার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন বিশ্বের যে-কোনো উন্নত দেশের উদাহরণকে আজ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। এক কথায় দেশের গ্রাম-শহর-মফস্বল-রাজধানী সর্বক্ষেত্রে নবজাগরণের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে-যার সব কিছুর নিয়ন্তা ও ভোগকারী শুধুই এদেশের জনগণ। শুধুমাত্র দুর্নীতি, ধর্মান্ধতা ও বিভিন্ন রকমের সংকীর্ণতা একটি বৈষম্যহীন কাঙ্খিত সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে এবং এর জন্য শুধুমাত্র সরকারকে দায়ী করলেই বিরোধী দলের সব কিছু হালাল হয়ে যায় না। সরকার বিরোধিতার নামে শুধু সরকারের দোষ না খুঁজে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করলে সরকারের বিভিন্ন স্তরে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো আরও শক্তিশালী হতো। শুধু সরকারে গেলে আর ক্ষমতায় থাকলেই দেশের কাজ করা যাবে-এ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ইংরেজ আমল ও পাকিস্তানী আমলে যখন এদেশের মানুষের ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না, তখন অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছিলেন যারা দেশ ও মানুষের সেবায় অংশ নিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন।
আজকের দিনে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সমাজ ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে এমন অসংখ্য চক্র বাসা বেঁধে আছে যারা সরকারের বিরোধী শক্তির সাথে আঁতাত করে সেখানে দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার জিইয়ে রাখতে চায়। বস্তুতপক্ষে, বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে, সমস্যা শুধু শিক্ষিত সমাজের মধ্যে যার ফলে সর্বস্তরের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিরাজ করছে আস্থাহীনতা ও সমন্বয়হীনতাজনিত সংকট। এ সমস্যা সমাজের উঁচু স্তরে অপেক্ষাকৃত বেশি বলে এর কুপ্রভাব নিচের দিকেও গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে সুষ্ঠু অবস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেলে দেশ সমৃদ্ধির উচ্চস্তরে উপনীত হবে-এই আশা সচেতন মহলে এখন আস্থার সাথেই ব্যক্ত করা  হচ্ছে। এ অবস্থায় আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে সম্মানীত সিলেটের মতো জায়গায় জনসভা করে যখন জনগণের মালিকানা ‘পুনরুদ্ধার’ এবং দেশকে ‘স্বৈরাচারমুক্ত’ করার আহবান জানানো হয়  তখন সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে এরা কারা? এরা সত্যিকার অর্থেই কি বাংলাদেশ এবং এর  জনগণের মঙ্গল চায়? এরা কখনো তা চাইতে পারে? এদের পূর্ব-পরিচয়ের দিকে একটু তাকালেই বোঝা যায়, এরা কখনও বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল চায়নি। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, ৭১’এ এদেরকে এদেশের জনগণ কাছে পায়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে ড. কামাল হোসেন কখনো কি পাকিস্তান বা লন্ডন থেকে এদেশে ফিরতেন? বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা হিসেবে নিজেকে দেশ-বিদেশে তুলে ধরতে পারতেন? বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কেউ কি তাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানাতেন? অথচ আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং তাঁর রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে তথাকথিত জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপি-জামাতের নেতৃত্ব দিতে মাঠে নেমেছেন! আর বিএনপি-জামাতকে নেতৃত্ব দিতে তিনি এমন এক সময় মাঠে নেমেছেন যখন আদালতে ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারেক-নিজামী-বাবরের সরাসরি মদদে এই হামলা চালানো হয়েছিল। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পরিচালিত ওই হামলার সাথে রাষ্ট্রীয় কয়েকটি সংস্থার প্রধানগণই জড়িত ছিল। যে হামলার একমাত্র লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এমন জঘন্যতম ষড়যন্ত্র ও হামলা যারা চালাতে পারে তাদের ব্যাপারে চুপ থেকে এবং এমন কি তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন যারা করতে চায় তারা কখনো বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু হতে পারে না, মুখে মুখে যত বড় কথাই তারা বলুক না কেন। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের যাবতীয় অর্জনকে সমুন্নত রাখতে হলে তাদের ব্যাপারে জাতিকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নেয়নি, বরং বিরোধিতা করেছে এবং যারা ১৫ই আগষ্ট ও ২১শে আগষ্টের হামলাকারীদের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের এদেশে রাজনীতি করারই কোনো অধিকার থাকতে পারে না। দুঃখজনক হলে ও সত্যি যে, ড. কামাল হোসেন আজ এই হামলাকারীদের পক্ষের শক্তির নেতৃত্ব ও স্বাধীনতাবিরোধী তথা পাকিস্তানপন্থীদের ক্রীড়ণকের ভূমিকায় আসীন হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি যে তার স্বভাবসুলভ পলায়নপর মনোবৃত্তি থেকে এই তথাকথিত নেতৃত্বের আসন থেকে কেটে পড়ে পাকিস্তান ও লন্ডনে পাড়ি জমাবেন তাও সময়ের ব্যাপার মাত্র।   
তবু আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, এই ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে দেশবাসীকে অতীতের চাইতে আরও বেশি সচেতন থাকার সময় এসেছে। দেশ ঠিকমতই চলছে। জনগণও ঠিক পথেই আছে, স্বাধীনতার সুফল এরা ভোগ করছে। প্রয়োজন শুধু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী এবং সরকার ও সরকারি দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বার্থান্ধ ও মতলববাজদের মুখোশ উন্মোচন করে সর্বক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন